বন্ধ হউক ভয়ংকর যাত্রা

17

বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ ও যুবকের সংখ্যা অনেক। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় দেশি-বিদেশি মানবপাচারকারী চক্র। উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) থেকে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিবিয়া থেকে ইতালি পৌঁছানোর জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতেই একেকজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর খরচ হচ্ছে আড়াই হাজার ইউরো থেকে তিন হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা)। এ বছর অবৈধভাবে সাগরপথে ইতালিতে পৌঁছে আশ্রয় চাওয়া বিদেশিদের মধ্যে শীর্ষ তিনে আছে মিসর, তিউনিশিয়া ও বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১১ হাজার ২৯ জন বাংলাদেশি সাগরপথে ইতালি পৌঁছেছে।
পাচারের শিকার ব্যক্তিরা বিদেশে গিয়ে নানা ধরনের অমানবিক পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে। আবার অনেককে জিম্মি বানিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। এসব প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমাদের যেমন আইনি ব্যবস্থাও অপ্রতুল। মানবপাচার ও অবৈধ অভিবাসনসংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছে। অনেক ধরনের চাপও আসছে বাংলাদেশের ওপর।
গত সেপ্টেম্বর মাসে সাগরপথে ইতালিতে পৌঁছানো বাংলাদেশিদের প্রায় সবাই লিবিয়া থেকে যাত্রা করে। আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তিদের অনেকে সহজে আশ্রয় পেতে নিজেদের বয়স ১৮ বছরের কম বলে দাবি করে। তারা বাংলাদেশ বা নিজ নিজ দেশ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে রওনা হয়। লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় তারা পাসপোর্ট ফেলে দেয়। এতে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোও কঠিন হয়। সম্প্রতি ইতালিতে কয়েক শ বাংলাদেশি তাদের বয়স কম দেখিয়ে পাসপোর্ট দেওয়ার দাবিতে দূতাবাসে হামলা চালায়। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাগরপথে ইতালিতে পৌঁছার পর তারা নিজেদের যে বয়স বলেছিল সে অনুযায়ী পাসপোর্ট দিতে হলে একেকজনের বয়স পাঁচ, ১০ বছর বা তারও বেশি পরিবর্তন করতে হবে। এতে তাদের আগের পাসপোর্টের তথ্যের সঙ্গে বড় ধরনের গরমিল দেখা দেবে। এ ছাড়া ইতালিতে ‘বোন টেস্ট’ করা হলে ওই ব্যক্তিদের প্রকৃত বয়স বেরিয়ে আসবে। এতে বাংলাদেশকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে।
একদিকে ভোগবিলাস ও প্রাচুর্যের হাতছানি; অন্যদিকে জীবনের রূঢ় কঠিন বাস্তবতা। এরই মধ্যে কিছু মানুষ জীবন বাজি রেখে বেঁচে থাকার উপায় খোঁজে। সামান্য উন্নত জীবনের আশায় নিজের পাশাপাশি পরিবারকেও ঠেলে দেয় প্রচ- ঝুঁকির মধ্যে। দেশের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। এই ভয়ংকর যাত্রা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দালালচক্রকে প্রতিহত করা শুধু নয়, তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।