ই-কমার্সের ৩৪ শতাংশ অর্থ খেয়ে ফেলছে অযৌক্তিক ব্যয়

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ডিজিটাল বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে দেশে গেল অর্থবছর নামে-বেনামে গড়ে ওঠেছিল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। আর এসব অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যে বড় বড় ছাড়ের লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এরমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) অ্যাকাউন্টে লেনদেন করেছে, তাদের বিষয়ে তথ্য নিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)। এমন ১২টি প্রতিষ্ঠান যে অর্থ সংগ্রহ করেছে তার ৩৪ শতাংশই খেয়ে ফেলছে ‘অযৌক্তিক ব্যয়’।
অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে ১২টি প্রতিষ্ঠানের নাম জানানো হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেখে সার্বিক খাতের একটা চিত্র বুঝানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফআইইউ।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকে বিএফআইইউ এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরে। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।
বিএফআইইউ পক্ষ থেকে জানানো হয়, ই-কমার্সের অর্থ লেনদেন নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করেছি। তবে বেশ কিছু ই-কমার্সের করপোরেট কাঠামো না থাকায় এ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ব্যক্তিনির্ভর অনেক প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশ হয়েছে নিজস্বভাবে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানে যেসব লেনদেন হয়েছে, সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেছি। সেখানে দেখা গেছে, ১২টি প্রতিষ্ঠান ৬ হাজার ১১৬ কোটি বা ৬৬ শতাংশ সরবরাহকারী ও বিক্রেতাকে দিয়েছে। এটাকে স্বাভাবিক বলা হচ্ছে। তবে বাকি ৩৪ শতাংশ অর্থ অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক খাতে ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ব্যয়ের-ই কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এসব অর্থ কোথায় গেছে, তাও চিহ্নিত করতে করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের শীর্ষ ১২ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাজ থেকে ১০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার সংগ্রহ করেছে। মোট সংগ্রহ করা অর্থের ৫ শতাংশ বা ৪৪১ কোটি টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করেছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বাড়ি-গাড়ি ও বিদেশ ভ্রমণসহ বিলাসী জীবনযাপনে অর্থ ব্যয় করেছে। এ ছাড়া ব্যবসার বাহিরেও বা ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন খাতে ব্যয় করেছে মোট টাকার ৬ শতাংশ বা ৫৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বড় বড় ইভেন্টে স্পন্সর হিসাবে ৪৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।
বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। ৫২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওপর তদন্ত করে ৩৩টির শতাংশ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, গেলো ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) হয়েছে ৮ হাজার ৫৭১টি। আগের বছরের চেয়ে এ সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬২ দশমিক ৩২ শতাংশ বা ৩ হাজার ২৯১টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ২৮০টি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৫৭৩টি।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয়। লেনদেন সন্দেহজনক হলে তদন্ত করি। এরপর যদি কোনও অপরাধের তথ্য প্রমাণ মিলে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। এ পর্যন্ত অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা, মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ, বিএফআইইউ পরিচালক রফিকুল ইসলাম, মো. আরিফুজ্জামান এবং অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।