কাজিরবাজার ডেস্ক :
লুটপাট, ভোটচুরি ও ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘দু-তিনটা সমাবেশ করে বিএনপির ভাবখানা এমন যে, তারা ক্ষমতায় এসে গেছে, ক্ষমতা এত সহজ নয়। এত সোজা না… খেলা হবে, রাজপথে খেলা হবে। আন্দোলনের খেলা হবে। ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে খেলা হবে। আগামী নির্বাচনে খেলা হবে। দুর্নীতি, লুটপাট, ভোটচুরির বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
বুধবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকার খিলগাঁও থানা ও ১, ২, ৩ ও ৭৫নং ওয়ার্ডের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজ মাঠে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দলের দায়িত্বশীল নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলন শেষে দ্রুত কমিটি গঠন করুন। দলের শৃঙ্খলা মানেন, দলটাকে বাঁচান। কমিটি করতে টাকা লাগবে না, এটা বিএনপিতে হতে পারে। আওয়ামী লীগে এ প্রাকটিস চলতে পারে না। টাকা-পয়সা নিয়ে মনোনয়ন বা কমিটি গঠন, এটা চিরতরে বন্ধ করতে হবে। এটা শেখ হাসিনার নির্দেশ। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বন্ধ করতে হবে। একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের নামে দুর্নাম বন্ধ করতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণ কষ্টে আছে আমরা বুঝি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মানুষের কষ্টও বেড়েছে। গরিব মানুষের কষ্ট, নিম্ন-মধ্যবিত্ত স্বল্পআয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এ কষ্টের কথা আমরা জানি, আমরা বুঝি, শেখ হাসিনাও বোঝেন। তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় আপনাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে। আজকে এ সংকটে উত্তরণের জন্য তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, চেষ্টা করছেন। একটু ধৈর্য্য ধরেন।’
রিজার্ভ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মন্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা কোন মুখে রিজার্ভের কথা বলেন। রিজার্ভ আমরা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছি। এখন বৈশ্বিক সংকটের কারণে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বিএনপির রিজার্ভ কতো ছিল? বিএনপির সময়ে ৪ দশমিক ৮ অর্থাৎ বিলিয়নও ছিল না।’
বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপির সমালোচনারও জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে হায়রে কাণ্ড। দৌড় রে দৌড়। বেশি দূরে নয়। শনির আখড়ার দৌড় ভুলে গেছেন? ফখরুল সাহেব শনির আখড়ায় পাবলিকে দৌড়ায়, পাবলিকে দৌড় দেয়। বিদ্যুৎ নিয়ে ফখরুল বড় বড় কথা বলেন। এ বৈশ্বিক সংকটের আগে দেশে কোনো বিদ্যুতের অভাব ছিলো না। গ্যাসের অভাব ছিল না। অথচ বিএনপি সময়ে বিদ্যুতের বদলে শুধু খাম্বা ছিল।’
বিএনপি লন্ডনের রিমোট কনট্রোলে চলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘ওখান থেকে ফরমায়েশ করে, আর এখানে ফখরুল নাচেন। যেমনি নাচায় তেমনি নাচেন, পুতুলের মতো। পুতুলের কী দোষ?’
তিনি আরও বলেন, ‘ফখরুল সাহেব নাচানাচি যে করছেন, আপনাদের আন্দোলনের নেতা কে? নির্বাচনের নেতা কে? দণ্ডিত আসামি? যে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবে না বলে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে ২০০৮ সালে। এই নেতাকে কি মেনে নেবে বাংলাদেশের জনগণ? শেখ হাসিনার মতো যোগ্যতা, সততা, দক্ষতা আর কারও আছে এ দেশের?
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নালিশ পার্টি। এদের লজ্জা নেই। দেশ-বিদেশে নালিশ করে বেড়াচ্ছে। তারা বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে শুধু দেশের বিরুদ্ধে নালিশ করে। বিএনপি মনে করে ভারত-আমেরিকা তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও নালিশ করে। নরেন্দ্র মোদী আপনাদের (বিএনপি) ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে এমন আশা থেকে বেরিয়ে ভোটের মাঠে আসুন।’
বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিবাস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তনের (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রেখে সংবিধান পরিবর্তন) মতো দাবি করার দুঃসাহস কী করে হলো? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চিন্তা বিএনপিকে মাথা থেকে নামাতে হবে। সংবিধান অনেক কচুকাটা করেছেন। জনগণ সংবিধানকে আর কচুকাটা করতে দেবে না।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব, কোথায় আছেন, আসুন একটু খিলগাঁও। একদিন আগে জনসভা করেছেন, এর তিন ভাগের এক ভাগ লোকও হয়নি। জনগ্রোত তো এখনো দেখেননি। ডিসেম্বরে সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাবেন।’
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সহ-সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত, সদস্য সহিদুল ইসলাম মিলন প্রমুখ।
খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়ন শরীফ আলী খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী।