কাজিরবাজার ডেস্ক :
দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে লোডশেডিং পরিস্থিতি। প্রতিদিনই বাড়ছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। রাজধানীতে প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে এ পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানে ৫/৬ ঘণ্টা পর পর একবার করে বিদ্যুৎ আসছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল ঘাটতির কারণেই এমনটি হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও আপাতত শীতের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কাছে আর কিছু করার নেই বলে দাবি করা হচ্ছে।
একমাত্র চাহিদা কমলেই লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও দাবি করছেন বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন বিদ্যুত উৎপাদনে ঘাটতি থাকছে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। মঙ্গলবার দিনের বেলা বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৮৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। ফলে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি ছিল ১৩শ ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের।
এই ঘাটতি মেটাতে লোডশেডিংয়ের বিকল্প ছিল না বলে দাবি করছে বিতরণ সংস্থাগুলো। ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ঢাকায় আজ (মঙ্গলবার) আমাদের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৬শ থেকে সাড়ে ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। কিন্তু সরবরাহ পেয়েছি মাত্র ১১শ ৮০ থেকে ১২শ মেগাওয়াট।
ফলে লোডশেডিং না করে আমাদের উপায় নাই। কোন কোন এলাকায় দিনে ৩ থেকে ৪ বারও লোডশেডিং করা হচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা কী করব? আমরা তো নিরুপায়। উৎপাদন বন্ধ থাকলে বিদ্যুৎ পাব কোথায়? আমরা আমাদের চাহিদার কথা জানাচ্ছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ তো পাচ্ছি না।
এর কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, মূল্যবৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রয়োজনমাফিক গ্যাস সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে পশ্চিমা বিশ্বে শীত শুরু হয়ে গেছে। ফলে দেশীয় পোশাক কারখানাগুলোতে অর্ডার বেড়েছে। সে কারণে শিল্পে বেড়েছে গ্যাসের চাহিদাও। শিল্পে গ্যাস দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ কমাতে হচ্ছে। শুধু কমাতে হচ্ছে না বন্ধও রাখা হয়েছে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তাই লোডশেডিং বাড়ছে।
পিজিসিবি’র সূত্রমতে, দেশের মোট ১৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে কারিগরি ত্রুটির কারণে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে ১৫টিতে। চুক্তির মেয়াদ না বাড়া এবং অন্যান্য কারণে বন্ধ রয়েছে ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর জ্বালানি স্বল্পতার কারণে বন্ধ রয়েছে ৫৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এদিকে গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে বন্ধ হওয়া চার বিদ্যুত কেন্দ্রেও উৎপাদন শুরু হয়নি পুরোপুরি।
এতে করে মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে পূর্ণরূপে চালু আছে মাত্র ১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই ১২টি কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই পূরণ করা হচ্ছে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা। সে অনুযায়ী বর্তমানে অন্তত ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তাই লোডশেডিংয়ের বিকল্প নেই বিদ্যুৎ বিভাগের হাতে।
এমন অবস্থায় গরমের তীব্রতা কমার অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাতকারে স্পষ্ট করেই বললেন, গরমের তীব্রতা না কমলে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তাপমাত্রা কমার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। লোডশেডিং নিয়ে আপাতত কিছুই করার নেই। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো সঙ্কটে পড়েছে। এ খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কারণে সক্ষমতা থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। স্পট মার্কেটে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির দাম বাড়ায় আমদানি করা যাচ্ছে না। এসব কারণেই মূলত মধ্যরাতেও লোডশেডিং হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম এখন বাড়তির দিকে। দাম বেশি হওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সংগ্রহ বন্ধ। দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি সরবরাহকারী দেশগুলো। বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিপণীবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখার সময় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু জ্বালানি সঙ্কটের কারণে এ উদ্যোগেরও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পাওয়ার সেলের মহাপরিচালকের কণ্ঠে আক্ষেপ।