প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অতিদরিদ্র মানুষের পক্ষে জেলা বা উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া প্রায়ই সম্ভব হয় না। চিকিৎসার ব্যয় বহন করাও তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। তাদের লক্ষ্যে রেখেই দেশব্যাপী গড়ে উঠেছিল কমিউনিটি ক্লিনিক। সেখানে বিনা মূল্যে ২৭ ধরনের ওষুধ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু মূলধারা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা এসব সুযোগ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। জানা যায়, ১৬ নদীর জেলা কুড়িগ্রামে চর রয়েছে চার শতাধিক। কমিউনিটি ক্লিনিক আছে প্রায় অর্ধশত চরে, বাকি সাড়ে ৩০০ চরে কোনো ক্লিনিক নেই। দুর্গম এসব চরের মানুষ অসুখবিসুখে প্রায় কোনো চিকিৎসাই পায় না, বিশেষ করে প্রসূতি মা ও নবজাত শিশুরা জরুরি মুহূর্তেও কোনো চিকিৎসা পায় না। অনেক চর থেকে কুড়িগ্রাম জেলা সদরে যেতে চার-পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায়। পথ যেমন দুর্গম, খরচও হয় অনেক, যা তাদের পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব। ফলে এসব মা ও শিশুকে প্রায়ই চরম পরিণতি ভোগ করতে হয়।
কুড়িগ্রামের জনসংখ্যা ২৪ লাখ ৪৬ হাজার। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বসবাস করে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ। বিচ্ছিন্ন এসব চরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বর্ষায় নৌকায় করে চলাচল করা গেলেও প্রয়োজনের মুহূর্তে নৌকাও পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে অনেক নদী শুকিয়ে যায়। জটিল রোগীকে অতি কষ্টে মূল ভূখণ্ডে আনতে হয়। এসব চরের লাখ লাখ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার বাইরে রেখে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। সে কারণেই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এসব ক্লিনিক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী প্রমাণিতও হয়েছে। এখন এই সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের, বিশেষ করে দুর্গম চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আরো কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে আধুনিক চিকিৎসাসেবা নাগালের মধ্যে না থাকায় চরাঞ্চলের এসব মানুষ হাতুড়ে চিকিৎসক কিংবা নানা অপচিকিৎসকের কাছে যায়, যা তাদের জন্য শারীরিক ও আর্থিক উভয়ভাবেই আরো ক্ষতির কারণ হয়।
দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে দুর্গম গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলের অতিদরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক একটি অত্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ। একে আরো বেশি ছড়িয়ে দিতে হবে এবং সেখানে যাতে চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলমান থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি, কুড়িগ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।