জাতিসংঘের দেওয়া বাংলাদেশে গুমের শিকার ৭৬ জনের তালিকায় দুই ভারতীর দুই বিছিন্নতাবাদী নাগরিক

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশে গুমের শিকার ৭৬ জনের যে তালিকা সরকারকে দিয়েছে জাতিসংঘ, সেখানে ভারতের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদীর নাম রয়েছে। ভারতের নিষিদ্ধ সংগঠন ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট-ইউএনএলএফ এর শীর্ষ নেতা ছিলেন তারা। এর মধ্যে একজন প্রায় ১০ বছর কারাভোগ শেষে মুক্তির পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। অন্যজন বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দি।
জাতিসংঘের গুমের তালিকায় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নাম থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মী ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ গত বছর গুমের শিকার ৭৬ জনের একটি তালিকা দেয় বাংলাদেশ সরকারকে। গত ১৪ আগষ্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট ঢাকা সফরের সময় এ তালিকা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারসহ কয়েকটি সংগঠনের কাছ থেকে গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ ওই তালিকা জাতিসংঘের কাছে পাঠায় বলে অভিযোগ আছে।
তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সেখানে ভারতের মনিপুর রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী, নিষিদ্ধ সংগঠন ইএনএলএফ এর চেয়ারম্যান সানায়াইমা রাজকুমার ওরফে মেঘেন ও আরেক শীর্ষ নেতা কেইথেল্লাকপাম নবচন্দ্র ওরফে শিলহেইবার নাম আছে।
ভারতের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো জানায়, ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর নেপাল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশের সময় গ্রেফতার হন সানায়াইমা রাজকুমার। আর কেইথেল্লাকপাম নবচন্দ্র গ্রেফতার হন ২০১৫ সালের মার্চে।
গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপের অভিযোগে হওয়া মামলায় ২০১৬ সালের জুনে সানাইয়ামা রাজকুমারের দশ বছরের সাজা হয়। তবে কারাগারে ভালো আচরণ করায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর মুক্তি পান তিনি। আর কেইথেল্লাকপাম নবচন্দ্রও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের বিচারাধীন মামলায় জেলে।
জাতিসংঘের গুমের তালিকায় ভারতের নিষিদ্ধ সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতার নাম থাকার বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যারা এ তালিকা জাতিসংঘের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তারা কীভাবে এ ধরনের কাজে জড়িত হওয়া, কীভাবে তালিকা করা উচিত সেগুলোর ব্যাপারে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। এতে বোঝাই যাচ্ছে যে পুরো তালিকাটাকেই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
যাচাই বাছাই না করেই জাতিসংঘের এমন কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা তো স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি যে বিদেশি নাগরিকও যে কি না বহাল তবিয়তে বাস করছে। তাকেও বাংলাদেশে গুমের শিকার হিসেবে জাতিসংঘ তার তালিকায় উল্লেখ দেখিয়ে উপস্থাপন করছে। তাহলে সেই প্রতিবেদনের ওপরে আমাদের কতোটুকু আস্থা থাকতে পারে? বিশ্বাস থাকতে পারে? এবং কেনো থাকবে এই প্রশ্ন কি আমরা করতে পারি না? প্রকৃত তথ্য জাতিংসংঘের তুলে ধরা উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।