ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইসির নির্দেশ

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ‘রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই’ এ নির্দেশনার মধ্য দিয়ে মূলত ভোটের প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নির্দেশনাটি সব জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে- আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালার’ আলোকে সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক প্রস্তাবিত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, আগামী বছর নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ওই বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে ইসি। এতে উল্লেখ করা হয়েছে- ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে খসড়া প্রকাশ, আগষ্টে সেই খসড়ার ওপর দাবি আপত্তি নিয়ে তা নিষ্পত্তি করা হবে। এরপর ভোটগ্রহণের ২৫ দিন আগে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
ইসির নির্দেশনারটির সঙ্গে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা নদী ভাঙন বা অন্য কোনো কারণে বিলুপ্ত না হয়ে গেলে ভোটকেন্দ্র হিসেবে তা ব্যবহার অব্যাহত থাকবে। বিলুপ্তির কারণে আলোচনার ভিত্তিতে পরিবর্তিত কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি নির্ধারণ করতে হবে।
ভোটার বাড়ার কারণে নতুনভাবে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি/নির্বাচিত প্রতিনিধি/রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনা করে নতুনভাবে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রের স্থান ও তালিকা নির্ধারণ করতে হবে।
ভোটকেন্দ্র স্থাপনে সরকারি ভবনসমূহকে প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, সরকারি অফিস, ক্লাব এ ধরনের ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে। কারো প্রভাবাধীন বা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয় এমন স্থানে কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না।
গড়ে ২ হাজার ৫০০ ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকেন্দ্র এবং গড়ে আনুমানিক ৬০০ জন পুরুষ ভোটারের জন্য ও ৫০০ জন নারী ভোটারের জন্য ১টি করে কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। তবে ইভিএমের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ৪৫০ জন পুরুষ ভোটারের জন্য ও ৪০০ জন নারী ভোটারের জন্য ১টি করে কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে।
অবস্থানগত কারণে কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা অধিক হলে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভোটারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অতিরিক্ত ভোটকক্ষের ব্যবস্থা করা যাবে। বিশেষ ক্ষেত্রে জনবসতি কম এলাকায় এবং ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে নির্দিষ্ট ভোটারের কম সংখ্যক ভোটারের জন্যও ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে (যেমন পার্বত্য জেলাসমূহ)। এছাড়া কম জনবসতিসম্পন্ন এলাকা, দুর্গম পার্বত্য এলাকা, দ্বীপ অঞ্চল ও প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে উপরোক্ত শর্তসমূহ শিথিল করা যেতে পারে, যাতে ভোটারদের ভোট দিতে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।
ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের সুবিধা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্র এ রূপভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে- ভোটার এলাকাগুলো যেন ভোটকেন্দ্রের সংলগ্ন ও সুনিবিড় হয় এবং সাধারণত দুটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের অধিক না হয়। কোনো ভোটার এলাকার ভোটারদের যেন নিকটস্থ ভোটকেন্দ্র অতিক্রম করে দূরবর্তী স্থানে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে গমন করতে না হয়।
যেসব ব্যক্তি রাজনীতির সঙ্গে অথবা নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের নামে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানসমূহে যতদূর সম্ভব ভোটকেন্দ্র স্থাপন থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকলে শর্তটি শিথিল করা যাবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিবিড় তদারকি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগ পর্যাপ্ত থাকতে হবে।
ভোটকেন্দ্র যে স্থানে/প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হবে সে স্থানের/প্রতিষ্ঠানের নাম অনুসারে ভোটকেন্দ্রের নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোনো অস্থায়ী জায়গায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হলে এলাকার অবস্থান সুষ্পষ্টরূপে উল্লেখ করতে হবে।
শহর এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ বিধায় পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হয়। শহর এলাকায় যতদূর সম্ভব পুরুষ ও নারীদের জন্য পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে পৃথক পৃথক ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে।
প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের নামের বিপরীতে উল্লিখিত প্রতিটি ভোটার এলাকার নাম উল্লেখ করতে হবে। ভোটার এলাকার নামের পাশে কতজন ভোটার উক্ত ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবে তার সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। পুরুষ ও নারী ভোটার সংখ্যা আলাদাভাবে দেখাতে হবে।
কোনো ভোটার এলাকাকে বিভক্ত করে একাধিক ভোটকেন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করা হলে ভোটার তালিকায় বর্ণিত ক্রমিক নম্বরগুলো ভোটকেন্দ্রের বিপরীতে প্রদর্শন করতে হবে, যাতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ভোটার তালিকায় কোন কোন ভোটারকে কোন কোন ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ভোটগ্রহণের দিন ভোটাররা অযথা হয়রানি বা বিভ্রান্তির সম্মুখীন না হন।
ভোটার এলাকাসমূহের মধ্যে যে ভোটার এলাকায় ভোটার সংখ্যা অধিক এবং যেখানে সুবিধাজনক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সে ভোটার এলাকাকে প্রাধান্য ও গুরুত্ব দিয়ে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সময় প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, নারী ও তৃতীয় লিঙ্গধারী (হিজরা) ভোটারদের ভোট প্রদানে অগ্রাধিকার আবশ্যিক বিবেচনায় রাখতে প্রাপ্ত আপত্তি নিষ্পত্তিকরণ: যদি কোনো ভোটকেন্দ্রের স্থান নির্ধারণ সম্পর্কে কারও কোনো লিখিত আবেদন/সুপারিশ বা আপত্তি থাকে তাহলে প্রাপ্ত আবেদন/সুপারিশ বা আপত্তিসমূহ সরেজমিনে যাচাই করে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত আবেদনসমূহ নিষ্পত্তির পর আবেদনকারীকে নিষ্পত্তিমূলক চিঠি দিতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্পও নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি।