চতুর্থ মেয়াদে শপথ নেয়ার পর প্রথম কার্যদিবসে প্রধানমন্ত্রী ॥ ক্ষমতাটা শুধু চেয়ারে বসে ভোগ করা নয়, এটা জনগণের কাছে দায়িত্ববোধ

59
চতুর্থ বারের মত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত শিখা অনির্বাণ চত্বরে সংরক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এর সদস্য রাষ্ট্র সমূহের রাষ্ট্রদূতগণ এবং চ্যার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সগণ সৌজন্য সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেয়ার পর প্রথম দিন অফিসে এসে জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণে কাজ করার জন্য কর্মকর্তাদের তাগাদা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, যে ওয়াদা আমরা জাতির কাছে দিয়ে এসেছি সেটা বাস্তবায়ন করতেই হবে। এটা করতে হলে কাজ করতে হবে। সেজন্য নির্বাচনী ইশতেহারকে আমরা গুরুত্ব দেই।
ক্ষমতাটা শুধু চেয়ারে বসে ভোগ করা নয়, এটা জনগণের কাছে দায়িত্ববোধ।
আগের মতোই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত সোমবার চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর রবিবার প্রথম কার্যালয়ে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমাদের যে লক্ষ্য ছিল- মাদকবিরোধী, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছিলাম। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযানগুলি যেন অব্যাহত থাকে। এই দুর্নীতি যেন আমাদের উন্নয়নের পথে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে বা আমাদের সকল অর্জন যেন ধ্বংস করে না দেয় সেজন্য দুর্নীতি রোধ করা এটাও আমাদের কর্তব্য।
সেইজন্য আমি বলব, এই অভিযানগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। তার জন্য আমাদের এই অফিসটা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশি।
প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতেও নিজের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি অনুরোধ করব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমরা যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশে শান্তি, নিরাপত্তা রক্ষা করা।
তিনি নিজেও আবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন শুরু করবেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে নিজের কার্যালয়ে প্রথম কর্মদিবসের প্রথম ভাগ কাটান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন তিনি।
কার্যালয়ের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, আমরা ১০ বছরে যা উন্নতি করতে পারলাম, তারা কেন তা করতে পারেনি। এ প্রশ্নের উত্তর যখনই খুঁজতে যাই তখনই মনে হয়, আসলে যারা স্বাধীনতাই চায় নাই তারাতো আর দেশের উন্নতি করবে না। করতে চায় না। তাদের কাছে ক্ষমতা ছিল একটা লোভের মতো।
একটা জাতিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে তার একটা ভিশন থাকতে হবে, দিকনির্দেশনা থাকতে হবে, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেটা না থাকলে কোনো দেশ এগোতে পারবে না।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাল মিলিয়ে চলতে হলে কোন দেশ উন্নত হল, উন্নত দেশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
আমরা চেষ্টা করব, নিজের পায়ে দাঁড়াব, আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে চলব। অন্য দেশ যদি পারে আমরা পারব না কেন? আমাদের কিসের অভাব? কোন অভাব নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শুধু উদ্যোগের অভাব, উদ্যমের অভাব, কাজ করার অভাব। তো সেই জায়গায়টায় আমরা যখনই এসেছি দিনরাত পরিশ্রম করেছি। সবাইতো বলছে, আপনারা এত খাটেন কেন? খাটাটাতো আমার নিজের জন্য নয়, খাটি দেশের জন্য, মানুষের জন্য।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ একটি উপস্থাপনায় নির্বাচনী ইশতেহার ও এসডিজি বাস্তবায়নে কর্মসূচী তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর চার উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মশিউর রহমান, তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীকে সাচিবিক অনুবিভাগ, ব্যক্তিগত অনুবিভাগ, প্রেস অনুবিভাগ এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন অধীনস্ত দফতরের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।