জরিপ, গবেষণা বা বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়ার সময় মানুষের যেসব ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে, সেসব তথ্য বা উপাত্তের সুরক্ষা দিতে নতুন একটি আইন করার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের সরকার। প্রস্তাবিত আইনটি ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন’ বা ‘ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট’ নামে পরিচিত হবে। এ বছরের এপ্রিল মাসে আইনটির খসড়া তৈরি করে তা জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করা হয়। গত জুলাই মাসে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়।
সেখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
প্রস্তাবিত ডাটা বা উপাত্ত সুরক্ষা আইনের বেশ কয়েকটি ধারা এবং অন্তত ১০টি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও আপত্তি জানিয়েছে জাতিসংঘ। খসড়া আইনের কয়েকটি ধারায় মানবাধিকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা জানানো হয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে তারা কিছু সুপারিশ করেছে। খসড়া আইনে স্পর্শকাতর তথ্য-উপাত্তের সংজ্ঞার গণ্ডি বেশ সীমিত উল্লেখ করে জাতিসংঘ বলছে, ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্তের কোনো সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়নি। খসড়া আইনের পঞ্চম অনুচ্ছেদে বলা তথ্য-উপাত্ত সুরক্ষার নীতি যথেষ্ট নয় বলেও মনে করছে জাতিসংঘ। উপাত্ত স্থানীয়করণ উন্মুক্ত ইন্টারনেট বিষয়ক বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বিধায় নজরদারি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করবে বলেও মত দিয়েছে তারা। নির্দিষ্ট অধিক্ষেত্রের মধ্যে উপাত্ত সীমিত করা, সেগুলো স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি এবং প্রকাশের ফলে নাগরিকদের তথ্যের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরো বাড়বে বলে মনে করে জাতিসংঘ। খসড়া আইন থেকে উপাত্ত স্থানীয়করণের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা। জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা বা কোনো ধরনের অপরাধ শনাক্ত ও তদন্ত করার উদ্দেশ্যে উপাত্ত সংগ্রহ করা যাবে উপাত্তধারীর কাছ থেকে উপাত্ত সংগ্রহের এই পদ্ধতি নিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, এতে প্রস্তাবিত আইনে বাংলাদেশে ডাটা সেন্টার ও সার্ভারগুলো নজরদারিতে পড়তে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার আইন রয়েছে। ইউরোপে জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশনে কোনো নাগরিকের অনুমতি ছাড়া তার ফোন নম্বর বা ব্যক্তিগত তথ্য কোথাও সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বা ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তার এই নতুন আইনের খসড়ায় ব্যক্তিগত তথ্য শব্দগুলোর কোনো সংজ্ঞা বা উদাহরণ না থাকায় অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। অংশীজন অনেকের মতে, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার নামে সরকারি, বিশেষ করে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা মানুষের সংবিধানস্বীকৃত অধিকার, বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার খর্ব করার ঝুঁকি তৈরি করছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই আইন উপাত্ত নিয়ন্ত্রণের নয়, বরং সুরক্ষার জন্য। তাই উপাত্ত সুরক্ষা আইন সর্বজনীন করার চেষ্টা করছে সরকার। আমাদের প্রত্যাশা অংশীজনদের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেই আইন প্রণীত হবে। বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার খর্ব করা হবে না।