বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
পাহাড়ি ঢলের বালিতে নষ্ট হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি। দিনে দিনে ফসলি জমি হারিয়ে দিশেহারা তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তের ২ ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষক পরিবার।
দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে পাহাড়ি বালির এ আগ্রাসন। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে এ বালির আগ্রাসন আরও অনেক দূর পর্যন্ত যাবে বলে মনে করেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে ৩৫০ হেক্টর জমি বালি পড়ে নষ্ট হয়েছে। স্থানীয়দের দাবী এ সংখ্যা আরো অনেক । তাদের মতে কমপক্ষে ৫শ হেক্টরের মত জমি বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ি বালির আগ্রাসনে নষ্ট হয়েছে।
ভারতের নয়ন জুড়ানো মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়রে অসংখ্য র্ঝনা বালি আগ্রাসনের মূল কারণ। ঝর্ণার সৌন্দর্য স্থানীয়দের কাছে আতঙ্ক। বৃষ্টি নামলইে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে এলাকার মানুষ কখন কোন দিক দিয়ে ঢল নামে আর জনপদ ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
উপজেলায় ৭ টি ইউনিয়ন রয়েছে। তন্মধ্যে এ বালির আগ্রাসন উত্তর বড়দল ইউনিয়নে ব্যাপক। তাছাড়া বাদাঘাট ও শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলের বালির আগ্রাসন রয়েছে তবে অনেকটা কম।
সরজমিন উপজেলার বাদাঘাট ইউনয়িনরে পুরান লাউড়রেগড় মনার পার(পাহাড়)উত্তরশ্রীপুর ইউনয়িনের বাগলি বীরন্দ্রেনগর ,চারাগাও,কলাগাঁও,লাকমাছড়া বড়ছড়া,উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনী লাইন, চানপুর, কড়ইগড়া সহ অসংখ্য স্থানে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের ঝর্ণার সৃষ্ট ছোট বড় নালা বা ছড়া রয়েছে অর্ধশতাধকি। আর এ সমস্ত ঝর্ণা বা ছড়া দিয়ে বৃষ্টির দিনে পাহাড়ি ঢলের পানির সঙ্গে নেমে আসা বালি ও পাথরে দিন দিন ঢাকা পড়ছে সীমান্তের ২০ কিলোমিটার এলাকার আশপাশ, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট। বিশেষ করে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের পচাশোল, রজনী লাইন, চানপুর হাওর মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রথম বড় ধররে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে চানপুর বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে। তখন থেকে এ ছড়াটির নাম হয় নয়া ছড়া। ২০০৮ সালেই পরিবেশ বিপর্য়য় রোধে কূটনতৈকি ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মলেনরে মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও র্সবস্ব হারানো ক্ষতগ্রিস্থ কৃষক পরবিার।
২০০৮ সালরে পর থেকে বছরে বছরে বর্ষকালে পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই ঢলের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত বালি,পাথর চলে আসছে বাংলাদেশ সীমান্তে।
২০০৮ থেকে ২০১৮ এর মধ্যে সীমান্তে অনেক গ্রামের অসংখ্য পরিবার বালির কারণে তাদের বাড়ি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আর সে সমস্ত জমি বালিতে ঢাকা পড়েছে সে সমস্ত জমিতে বর্তমানে কোন কিছুই ফলানো যাচ্ছে না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দিন দিনে এখানকার কৃষি জমি আরও বিপন্ন হবে তাই এখনই এর উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য দাবী জানিয়ে আসছেন স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবার।
উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রাজাই গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব তিনি বলেন, গত ৫/৬ বছরে পাহাড়ি বালি পরে আমার অনেক জমি নষ্ট হয়ে গেছে। সেই সাথে বছরে বছরে বালি পরে আরও জমি নষ্ট হওয়ার দিকে। তার মতে গত ১০ বছরে তিন ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫শ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে বালি পড়ে।
সীমান্ত গ্রাম বড়ছড়া সেখান ব্যাবসায়ী তমাল তালুকদার তিনি বলেন,আমাদের পৈত্রিক বাড়িটি সীমান্তে নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় ছিল। বর্ষকালে ছড়া দিয়ে পানির সাথে বালি চলে এসে দিনে দিনে আমাদের পৈত্রিক বাড়িটি নষ্ঠ হয়ে যাওয়ায় আমরা একটু দূরে সরে এসেছি।
উত্তর বড়দল ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসান বলেন, গত ৪/৫ বছর প্রচুর পরিমাণ পাহাড়ি বালি এসছে। চলতি বছর তেমন বালি আসেনি। এ বছর গড়ে ২ থেকে ৩ হেক্টর জমিতে বালি পড়েছে বলেও তিনি জানান।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরষিদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, আমার ইউনিয়নে ৩ টি ছোট ছোট হাওরে এক সময় কৃষকরা প্রচুর পরিমাণ ফসল ফলাতো কিন্তু বিগত ৭/৮ বছর ধরে এ সমস্ত জমিতে আর কোন কিছুই ফলাতে পারছে না। বর্তমানে ঐ হাওর গুলোর সমস্ত জমি বালিতে ঢাকা পড়ে আছে কোন কিছুই ফরাতে পারঝেনা কৃষক।
তাহিরপুর উপজলো কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন,উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নে ৩৫০ হেক্টরের মত ফসলি জমিতে বালি পড়েছে। বর্তমানে কিছিু কিছু জায়গায় ফসল আবাদ করা যাচ্ছে।