আবার সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটল। এবার ঘটনাটি এমন একসময়ে ঘটেছে, যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন। এবারের সফরে দুই দেশের সরকারপ্রধানদের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। অনেক অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার দাইনুর সীমান্তে গত বুধবার মধ্যরাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় স্কুলছাত্র মিনহাজুল ইসলাম মিনাজ। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের নারায়ণপুর সীমান্ত এলাকা থেকে এক বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, ওই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে হত্যার ঘটনাটি সত্যিকার অর্থেই দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে। কোনোভাবেই এই হত্যা বন্ধ হচ্ছে না বা বন্ধ করা যাচ্ছে না। অথচ উভয় দেশের সরকার, নেতৃত্ব মনে করে যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং দুই দেশের মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় যেসব সমস্যা রয়েছে, অবিলম্বে তার মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন।
ভারত ও বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত সব সময়ই সংবেদনশীল। কাজেই সব রকম সমস্যারও মীমাংসা হওয়া খুব জরুরি। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হয়। গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে কথা বলেছেন। ২০২১ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের ১৯তম স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতের তরফ থেকে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। গত জুলাই মাসে বিজিবি ও বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, আহত ও মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে দুই পক্ষ একমত পোষণ করে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে কেন? এটাও তো ঠিক যে সীমান্তে চোরাচালান, অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটছে। গরুপাচার, শিশু ও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে।
সীমান্ত হত্যা বন্ধ হওয়া দরকার। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত বহুবার আলোচনা করেছে। সব সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন চোরাচালান, মানবপাচারসহ অন্য সব অপরাধ কর্মকাণ্ড কিভাবে রোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সব কিছুর আগে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার যে সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র (লিথাল উইপন) ব্যবহার করা হবে না। কারণ গুলি চালিয়ে একজন চোরাকারবারিকে হত্যা করা যেতে পারে, কিন্তু তাতে তো মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়াটা অনেক বেশি জরুরি। সেখানে সীমান্ত হত্যা সম্পর্কের বিভাজনের কারণ হতে পারে না। সে কারণে এ বিষয়ে দুই দেশের আলোচনা করা প্রয়োজন। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।