সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ॥ পাঁচটি পরিবারের পারিবারিক সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় আনোয়ার মাস্টার

3

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের জকিগঞ্জের পশ্চিম কসকনকপুরের মৃত ইব্রাহীম আলীর ছেলে ফয়জুর রহমান উরফে আনোয়ার মাস্টার ও তার ছেলেদের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন প্রবাসীসহ পাঁচটি পরিবার। এসব পরিবারের সহায় সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছেন আনোয়ার মাস্টার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন উপজেলার পশ্চিম কসকনকপুরের ডা. আবদুল হকের ছেলে মো. সাহেদুল আলম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চাচা আনোয়ার মাস্টার ও চাচাতো ভাইদের হয়রানি, হুমকি-ধামকির কারণে পাঁচটি পরিবারের জীবনযাপন অতিষ্ট। জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সবাই। দাদা মৃত ইব্রাহীম আলী মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া জায়গা-সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আনোয়ার মাস্টারের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এসব অন্যায় আচরণে লিপ্ত হয়েছেন।’
পাঁচটি পরিবারের পক্ষে আনোয়ার মাস্টারের বিরুদ্ধে পৃথক স্বত্ব মামলা, বাটোয়ারা মামলাসহ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে একাধিক মামলা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুটি মামলায় আদালত আনোয়ারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাহেদুল বলেন, ‘এ কারণে গত ১৭ আগস্ট আনোয়ার মাস্টারের ছেলেরা আমাদের উপর হামলা করেন, চাঁদা দাবি করে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানায় মামলা (নং-১১(৮)২২) দায়ের করি। মামলায় অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ সুহেদ, আমিনুর রশিদ জাহেদ ও হুমায়ুন রশিদ সাদেককে গ্রেফতার করেন। ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘মনোয়ারা দাবি করেছেন ভূমি সংক্রান্ত মামলায় হেরে গিয়ে আমরা তাদেরকে হয়রানি করছি। প্রকৃতঅর্থে ভূমিসংক্রান্ত মামলার রায় তাদের পক্ষে যায়নি। ১৭ আগস্টের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আমাকে থানায় চারদিন ঘুরতে হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত সাপেক্ষে মামলার আবেদনে সত্যতা পেয়ে তিন জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। বাকিরা এখনও গ্রেফতার হয়নি। মোবাইল ফোন, লুণ্ঠিত টাকা এখনও উদ্ধার হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে সাহেদুল আলম বলেন, ‘দাদা মৃত ইব্রাহীম আলীর উত্তরাধিকারী ছয়টি পরিবারের পাঁচটি পরিবার একযোগে কেন আনোয়ার মাস্টারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এটা দিবালোকের মত সত্য। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত, তিনি চাচাতো ভাইদের জমিজমা জোরপূর্বক দখল করতে মরিয়া। তিনি সৎ থাকলে কোনো না কোনো পরিবার তার পক্ষে থাকতো।’
গত ২৭ আগস্ট আনোয়ার মাস্টারের স্ত্রী মনোয়ারা খানম সংবাদ সম্মেলনে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন সেগুলোর সব মিথ্যে, সাজানো ও বানোয়াট দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের পাঁচটি পরিবার একপক্ষে থাকাই প্রমাণ করে তাদের অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মামলাগুলোকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছেন।’
লিখিত বক্তব্যে পরিবারগুলো জানায়, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জায়গা-জমি স্বত্ব যথাযথভাবে বুঝে পেতেই তারা মামলা করেছেন।
সাহেদুল বলেন, ‘হামলা-মামলার শুরুটা আনোয়ার নিজেই করেছেন। ২০২০ সালে তিনি বাদি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল (এলএসটি) সিলেটে মামলা (নং-৪৮৩/২০) দায়ের করেন। জমিতে ধানকাটা, বাড়ির গাছকাটা, পুকুরের মাছ মারার অভিযোগে সাহেদুল আদালতে মামলা নং ৩২/২১ ও ৩৩/২১ দায়ের করেন। এ দুটি মামলার রায় আনোয়ার মাস্টার ও ছেলেদের বিপক্ষে গেছে। তাই বিভিন্নসময়ে হামলা করে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। যা এলাকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, প্যানেল চেয়ারম্যান ও মেম্বার অবগত রয়েছেন। তফজ্জুল আলীর ছেলে আবু জাফর সিদ্দিকীকেও তারা মারপিট করেছে। যার কারণে তার মা শেলিনা আক্তার বাদি হয়ে মামলা (১৩৭/২০) দায়ের করেন। যা এখনও চলমান।’
আনোয়ার মাস্টার ও তার ছেলেদের হাত থেকে ২টি প্রবাসী পরিবারসহ ৫টি পরিবারের সদস্যদের হয়রানীমুক্ত করতে এবং তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাহেদুলের চাচা আমেরিকা প্রবাসী আজিজুর রহমানের ছেলে আমির আব্দুল্লাহ হোসেন মুক্তা, মৃত চাচা আবদুল মতিনের ছেলে আমেরিকা প্রবাসী নূরে আলম বাবলার পক্ষে তার ভাগ্না শিমুল আহমদ, মৃত চাচা আব্দুন নূরের একমাত্র মেয়ে লুৎফা বেগম এবং চাচা তফজ্জুল আলী।