কাজিরবাজার ডেস্ক :
২৪ আগষ্ট এলেই ভৈরববাসীর মনে পড়ে নারী আন্দোলনের রাজপথের সৈনিক ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার আজন্ম সংগ্রামী শহীদ আইভি রহমানের কথা। তিনি নেই কিন্তু তার স্মৃতি বহন করছে ভৈরববাসীর বুকে। অনেকে নীরবে কাঁদেন। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঢাকার পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা তার সংগ্রামী জীবন কেড়ে নেয়। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান। সময়ের হিসেবে ১৮টি বছর পার হলেও নারকীয় হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের এখনও পর্যন্ত রায় কার্যকর না হওয়ায় ভৈরববাসীর মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দিনটি উপলক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছে।
ঢাকা কলেজে তৎকালীন স্বনামধন্য অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন আহমেদের মেয়ে আজন্ম সংগ্রামী আইভি রহমান ১৯৪৪ সালে ৪ জুলাই কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চন্ডীবের এলাকায় এক শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। তিনি সারা জীবন অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন করে গেছেন। তিনি ১৯৬৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
এ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ে সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি স্বামী জিল্লুর রহমান তার সংগ্রামী জীবনকে গতিশীল রাখতে সব সময় প্রেরণা হয়ে কাজ করেছেন। তার এই সংগ্রাম বিশেষ করে পিছিয়ে পরা নারীদের মুক্তির পথ দেখিয়েছে। সেদিনের তার এই সংগ্রামী আদর্শ দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
১৯৭১ সালে বাঙালীর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনের ভূমিকা পালন করেন এবং ভারতে গিয়ে সশস্ত্র ট্রেনিং ও গ্রহণ করেন। শহীদ আইভি রহমানের পারিবারিক সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আইভি রহমান রাজনৈতিক অঙ্গনে পদচারণা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
১৯৭৫ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য নির্বাচিত হন আর ১৯৭৮ সালে হন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। ১৯৮০ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের গুরু“দায়িত্ব কাঁধে নেন, সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। এর আগে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার পর তার রাজনৈতিক কর্মকা- ছিল সাহসী। রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিভিন্ন সময় গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তরীণ রাখার সময় ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন মতিয়া চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরী, জোহরা তাজ উদ্দীনসহ বেগম আইভি রহমানও গ্রেফতার হন।
ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা জানান, নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তিনি তৎপর ছিলেন আমৃত্যু। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মহিলা সংস্থা এবং মহিলা সমিতির চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি।
জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় অনেক দুস্থ অন্ধজনের চোখে আলো জ্বালাতে সাহায্য করেছেন তিনি। রাজনীতির বাইরে তার এই সমাজকর্ম সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। মহীয়সী এই নারীর মৃত্যুতে ভৈরববাসীসহ জাতি হারিয়েছে নক্ষত্র।
শহীদ আইভি রহমানের স্মৃতি ধরে রাখতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব থানার সামনে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ আইভি রহমান মেমোরিয়াল গেট।
ভৈরবে কর্মসূচী : আইভি রহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে ভৈরব এ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছে। ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ সায়দুল্লাহ মিয়া জানান, শহীদ আইভি রহমান স্মরণে ২৪ আগস্ট দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ-দোয়া হবে। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শহর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অঙ্গ সংগঠন দিবসটি পালন করবে নানাভাবে। বেলা সাড়ে ১১টায় স্থানীয় এমপি পাইলট গার্লস স্কুলে আলোচনাসহ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।