কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাশিয়ার উৎপাদন পূর্বধারণার চেয়ে ভালো হওয়ায় এবং বৈশ্বিক চাহিদা কমায় বছরের বাকি অংশে অপরিশোধিত তেলের দাম পূর্বাভাসের চেয়ে ২০ শতাংশ কম থাকবে বলে জানিয়েছে আইএনজি। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংকটির নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বছরের শেষ তিন মাসে অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৯৭ মার্কিন ডলার থাকতে পারে।
আইএনজির আগের পূর্বাভাসে বছরের শেষাংশের জন্য ব্রেন্টের সম্ভাব্য দর ধরা হয়েছিল ব্যারেলপ্রতি ১২৫ ডলার। অর্থাৎ নতুন পূর্বাভাসে ব্রেন্টের দাম এক লাফে ২২ শতাংশ কমানো হয়েছে।
শুক্রবারের ওই পূর্বাভাসে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) সম্ভাব্য দামও কমিয়েছে ব্যাংকটি। আগের পূর্বাভাসে বছরের শেষ তিন মাসের জন্য এর সম্ভাব্য দর ১২২ ডলার বললেও নতুন পূর্বাভাসে তা কমিয়ে মাত্র ৯৪ ডলার ধরা হয়েছে।
আইএনজির চিফ কমোডিটিজ স্ট্র্যাটেজিস্ট ওয়ারেন প্যাটারসন গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে এক নোটে বলেছেন, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে, যার অর্থ- তেলের বাজার যতটা ভাবা হয়েছিল, ততটা আঁটসাঁট নয়। এছাড়া, দুর্বল চাহিদার ফলে বছরের বাকি অংশে তেলের ভারসাম্য আরও স্বস্তিদায়ক দেখাচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল উৎপাদক রাশিয়া। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটি ইউক্রেন আক্রমণ করলে তার পরের মাসেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা এবং জ্বালানি কোম্পানিগুলোর বর্জন নীতির কারণে রাশিয়ার উৎপাদন দ্রুত কমে যাবে, এই আশায় তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু ওই সময়েই রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়ে দেয় ভারত-চীনের মতো দেশগুলো। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ চাহিদাও ছিল শক্তিশালী। ফলে সব পূর্বাভাসকে ভুল প্রমাণ করে গত জুলাই মাসে দেশটির তেল উৎপাদন ছিল যুদ্ধপূর্ব সময়ের তুলনায় সামান্য কম এবং ২০২১ সালের বেশিরভাগ অংশের তুলনায় বেশি।
তাছাড়া, তেলের বাড়তি দামের কারণে মানুষ জ্বালানি ব্যবহারও কমিয়ে দিয়েছে। অর্থনীতির ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘ডিমান্ড ডেস্ট্রাকশন’ বা চাহিদা ধ্বংস। এবারের গ্রীষ্মে প্রত্যাশার চেয়ে কম গ্যাসোলিন কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িচালকরা। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চীনের শিল্পগুলোতে তেলের ব্যবহার হয়েছে কম। রয়েছে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কাও।
শুক্রবার (১৯ আগষ্ট) বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯৫ ডলারে, যা গত জুনের তুলনায় অন্তত ২০ শতাংশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক জেপি মরগানের মতে, মূল্যস্ফীতি সংকটে জর্জরিত বিশ্বে ক্রেতারা সস্তা জ্বালানির জন্য হন্যে হয়ে ওঠায় রাশিয়াকে তার তেলের গতিপথ পরিবর্তন করতে খুব সামান্যই সমস্যা হয়েছে।
জেপি মরগানের কমোডিটিজ স্ট্র্যাটেজিস্ট নাতাশা কানেভাসহ অন্য বিশ্লেষকরা গত জুলাইয়ের এক নোটে বলেন, সর্বোচ্চকালে তেলের বাজার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য দাম নির্ধারণ করছিল। গ্রীষ্মকালে রেকর্ড সর্বোচ্চ চাহিদার সঙ্গে বাজার থেকে দৈনিক ৩০ লাখ ব্যারেল রুশ তেল হারিয়ে যাওয়ার সম্মিলিত ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। যদিও, বাস্তবে এটি কখনোই ঘটেনি।
আইএনজি অবশ্য বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রুশ তেল নির্ভরতা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনার পরিকল্পনার কারণে আগামী বছরের প্রথমাংশের মধ্যে রাশিয়ার উৎপাদন হয়তো সত্যি সত্যি কমতে পারে।