জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে ঘরবাড়ির চাহিদা। কৃষিজমিতে তৈরি হচ্ছে বাড়ি। বড় শহরগুলোর আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে আবাসন প্রকল্প।
মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে প্লট কেনার জন্য। বাড়ছে রাস্তাঘাটের চাহিদা। একই সঙ্গে গড়ে উঠছে নানা ধরনের শিল্প-কারখানা। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে কৃষিজমি। কৃষিজমির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে ইটখোলা। এসব ইটখোলায় মাটির জোগান দিতে গিয়ে বদলে যাচ্ছে কৃষিজমির ধরন। ওপর থেকে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে জমির উর্বরাশক্তি লোপ পায়।
জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগরে ২০১৭ সালে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ২৪ একর। ২০২২ সালে এসে সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৬৭৩ একরে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে ১২ হাজার ৩৫৫ একর আবাদি জমি কমেছে। গড় হিসাবে, বছরে কমেছে দুই হাজার ৪৭১ একর। আর এভাবে কৃষিজমি কমার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে ইটখোলাগুলো। ড্রেজিং মেশিন দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কৃষিজমি থেকে মাটি ও বালি তুলে নেওয়া হচ্ছে। শুধু মুরাদনগর নয়, সারা দেশেরই অবস্থা কমবেশি একই রকম।
জানা যায়, উপজেলায় পৌনে ২০০ ড্রেজার মেশিন দিয়ে নিয়মিত মাটি কাটা হচ্ছে। এসব মাটি পাইপ বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটখোলায়। পুকুর বা নিচু জমি ভরাটের কাজেও এই মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে এসব মাটি ও বালি বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে অনেক গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের কৃষিজমিতে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। তখন সেসব জমির মালিকরা বাধ্য হন প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে নামমাত্র মূল্যে জমি বা জমির মাটি বিক্রি করে দিতে। দ্রুত এই ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া বন্ধ করা না গেলে মুরাদনগরে কৃষির উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাবে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯-এ অকৃষি খাতে কৃষিজমির ব্যবহারকে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। কৃষিজমি রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কৃষিজমি সুরক্ষাসংক্রান্ত বেশ কিছু আইনও রয়েছে। এর পরও ক্রমবর্ধমান হারে কমছে কৃষিজমি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ‘কৃষিজমি (যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ) বিল-২০২২’ নামে একটি বেসরকারি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। তাতে আইন অমান্যকারীদের তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, কৃষিজমি রক্ষায় আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত বন্ধ করতে হবে এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা।