স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট নগরের উপশহরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ৫১ মাস ধরে বাসাভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা শামীম ইকবালের বিরুদ্ধে। ভাড়া চাওয়ায় উল্টো বাসার মালিক বয়োঃবৃদ্ধ নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের ছাদ থেকে ফেলে হত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন উপশহরের ডি বøকের ১৪ নম্বর সড়কের ২৬ নম্বর বাসা মোবারক মঞ্জিলের মরহুম আব্দুল হাই সাজ্জাদের স্ত্রী নেহারুন বিবি (৬০)।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সরকারি দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের বড় নেতা পরিচয় দানকারী মো. শামীম ইকবালের কারণে আজ আমিসহ আমার সন্তানদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। শামীম ইকবালকে বাসা ভাড়া এখন বিপদে পড়েছি। আমার পাওনা টাকা চাইতে গেলে তিনি উল্টো আমাকে, আমার ছেলে-মেয়েকে এবং আমার বাসার কাজের মেয়েকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।’ নেহারুন বিনি বলেন, ‘শামীম ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ আমার বাসার নিচতলায় মাসিক ২৫ হাজার টাকা ভাড়া প্রদানের শর্তে ভাড়া নেন। ওই সময়ে নানা কারণে চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে চুক্তি সম্পাদনের কথা বললে তিনি বারবার নানা টালবাহানায় সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। নানাভাবে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে চুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বারবার। কয়েক মাস ভাড়া দিলেও পরে বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া দেননি।’
এই বৃদ্ধ নারীর অভিযোগ, শুধু ভাড়ার টাকাই নয়, ২০২২ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি শামীম তার ঘরে উপস্থিত হয়ে বিশেষ প্রয়োজনের ধার হিসেবে ৪০ হাজার টাকা চান। তিনি বকেয়া ভাড়াসহ ধারের টাকা একসাথে পরিশোধের আশ্বাস দেন। কিন্তু তিনি তা ফেরত দেননি। তিনি জানান, বারবার অনুরোধ সত্তে¡ও শামীম বাসা ভাড়া বাবদ পাওনা টাকা না দেওয়ায় ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তাকে এ ব্যাপারে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। তাতেও তিনি ভ্রæক্ষেপ করেননি।
নেহারুন বিবি বলেন, ‘বকেয়া টাকা আদায়ের ব্যাপারে আমি স্থানীয় মুরব্বিদের সহযোগীতা চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। একাধিকবার সালিশ বসানোর চেষ্টা করলেও তিনি বিচার মানতে রাজি হননি। বরং, তিনি কয়েকজন মুরব্বিকে অগ্রিম আমাকে ১৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন বলে দাবি করেন। এর প্রমাণ চাইলেও তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন।’
টাকা না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ করে বয়োবৃদ্ধ এই নারী বলেন, ‘গত ২২ মার্চ শামীম আমার বাসার ছাদে অবস্থানকালে পাওনা নগদ চল্লিশ হাজারসহ বকেয়া ৫১ মাসের ভাড়া বাবদ ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাই। টাকা চাওয়ায় তিনি আমাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারধর করতে উদ্যত হন। এ সময় ছেলে ফয়েজ আহমদ ও কাজের মেয়ে তামান্না সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’
নেহারুন বিবি আরও বলেন, ‘এ সময় শামীম আমার পাঠানো লিগ্যাল নোটিশ প্রত্যাহার না করলে ছাদের উপর থেকে মাটিতে ফেলে আমাকে হত্যার হুমকি দেন। এসব ব্যাপারে মামলা মকদ্দমা করলে কাজের মেয়ে তামান্নাসহ আমার ছেলে-মেয়েদের খুন করে লাশ গুম করারও হুমকি দেন তিনি।’ এ ব্যাপারে শাহপরাণ থানায় একটি অভিযোগও দায়ের দেওয়া হয়েছে।
শামীমের হুমকিতে জীবনশঙ্কায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একজন বয়স্ক বিধবা মহিলা। পবিত্র রোজার মাসে নিজে রোজা থেকে আপনাদের কাছে যে বক্তব্য রাখলাম আপনারা চাইলে সরজমিনে বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে সত্যতা জানতে পারেন।’
নেহারুন বিবি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেটের পুলিশ প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নীতিনির্ধারকদের কাছে ন্যায়-বিচার প্রত্যাশা করেন। তিনি পাওনা টাকা উদ্ধার, শামীমকে বাসা থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।