কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী জাতীয় সম্মেলন ও সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজাতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে। নির্ধারিত সময়ে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। একই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে দলের সাংগঠনিক কাজ আগেই গুছিয়ে রাখতে চান তারা। ফলে আগামী তিন মাসের মধ্যে ৩৪ মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি শেষ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়েই আমাদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে তৃণমূল থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা হচ্ছে। ডিসেম্বরের আগেই আমরা সবগুলো জেলা সম্মেলন শেষ করতে চাই। তবে কোনো কারণে যদি নির্দিষ্ট সময়ে সম্ভব না হয় তাহলে ওই জেলা কমিটির সম্মেলন পরে করব। তিনি আরও বলেন, দলীয় কর্মকাণ্ডে যারা ভূমিকা রেখেছেন, যাদের ভূমিকায় দল সন্তুষ্ট, তাদের পদায়ন করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, কমিটিগুলোতে কোনো ত্যাগী নেতা বা ভালো নেতা যেন কারও ব্যক্তিগত রোষানলে পড়ে বাদ না পড়েন সেটা যাচাই-বাছাই করা হয়। সব ঠিক থাকলে কমিটি দলীয় সভাপতির কাছে পাঠানো হয়।
অনেক সময় জেলা থেকে কমিটি পাঠানো দেরি করে। যে কারণে কমিটি করতেও দেরি হয়। কিন্তু এবার যেহেতু আমাদের জাতীয় সম্মেলন সামনে তাই কমিটিগুলোও খুব দ্রুত হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতির অংশ হিসাবে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়নে নতুন কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। সারা দেশে দলটির ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৪টির সম্মেলন এখনো বাকি। উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে আরও প্রায় ৬৫০টির মতো। যার মধ্যে সাড়ে চারশর অধিক মেয়াদোত্তীর্ণ।
দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, গত মে মাসে জেলা-উপজেলার সম্মেলন বেশি হয়েছে। কিন্তু জুন মাসে বন্যা এবং পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে অনেক জেলা-উপজেলার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। এরপর ছিল ঈদের ব্যস্ততা। এখন আবার নতুন করে সাংগঠনিক কাজে গতি ফিরবে বলেও জানান তারা।
এদিকে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগের হাতে আর সময় আছে মাত্র সাড়ে চার মাস। এর মধ্যে জাতীয় শোকের মাস আগস্টে সব ধরনের সাংগঠনকি কার্যক্রম বন্ধ রাখে দলটি। ফলে সব মিলিয়ে হাতে আছে মাত্র তিন মাসের কিছু বেশি সময়। দেশের চলমান করোনা ও বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করে এই সময়ের মধ্যেই দলীয় প্রধানের নির্দেশনা মোতাবেক দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বাকি জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। এ লক্ষ্যে ৮টি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা বেশ জোরালোভাবে মাঠে রয়েছেন।
ঢাকা বিভাগে আওয়ামী লীগের ১৭টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটির সম্মেলন হয়েছে। বাকিগুলোর সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগে একেবারে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিট সম্মেলন শেষ করে থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
প্রায় প্রতিদিনই থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের সম্মেলন চলছে। ঈদের আগে সম্মেলন হওয়া ইউনিট নেতাদের নিয়ে পরিচিতি সভা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগও। খুব শিগগিরই তারাও ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন শুরু করবে বলে জানা গেছে। ডিসেম্বরের আগেই এই বিভাগের সব জেলায় সম্মেলন শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদে সবচেয়ে বেশি সম্মেলন হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। ইতোমধ্যে এই বিভাগের নয়টি সাংগঠনিক জেলার সবগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা-পৌর কমিটিগুলোর সম্মেলনও প্রায় শেষের দিকে। যেগুলো বাকি ছিল সেগুলোর প্রস্তুতিও চলছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, রাজশাহী বিভাগের ৮৩টি সাংগঠনিক উপজেলার মধ্যে ৭০টির অধিক সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। ১৫ তারিখে তানোর উপজেলা সম্মেলন। বাকিগুলোর কাজ চলছে। দ্রুত সম্মেলনের কাজ শেষ করে নেত্রীর পরামর্শ নিয়ে কর্মিসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
খুলনা বিভাগে মোট সাংগঠনিক জেলা ১১টি। এ বিভাগের দুই জেলা- ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ। মে মাসে এই জেলার সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছিল। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অসুস্থ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। আর একটি পৌরসভার ভোটের কারণে ঝিনাইদহ জেলার সম্মেলন করা যায়নি। ঈদের পরে এখন খুব দ্রুত এই দুই জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।
চট্টগ্রাম বিভাগে নয়টি জেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে। তবে প্রতিটি জেলায় তৃণমূল সম্মেলনের কাজ চলছে। সিলেটের পাঁচটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের সম্মেলন বাকি থাকলেও বন্যার কারণে সুনামগঞ্জে সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। বরিশালের ছয়টি জেলার মধ্যে তিনটির মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে একটি জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পাঁচটিরই মেয়াদোত্তীর্ণ। জেলা সম্মেলন করার জন্য উপজেলাগুলোয় পুরোদমে সম্মেলন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। রংপুর বিভাগে সাংগঠনিক জেলা রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ।