গোয়াইনঘাটে পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যায় ভয়াবহ রূপ, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন

22
পাহাড়ি ঢলের কারণে আবারও সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হামিদ আলী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি- কে.এম লিমন

গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে সিলেটের সীমান্ত উপজেলা গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন এলাকা। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্লাবিত হচ্ছে বন্যার পানি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলার প্রতিটি নদ-নদী ও হাওর অঞ্চলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ভারতের মেঘালয় এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ অতিমাত্রায় হওয়াতে সীমান্তবর্তী উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কৃষি জমিসহ রাস্তাঘাট বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ কারণে সড়কপথে সিলেট জেলা শহরের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার যোগাযোগ ও উপজেলা সদরের সাথে ১২ টি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি সারি-পিয়াইন ও ডাউকি নদি দিয়ে এলাকায় ঢুকছে। এতে পূর্ব জাফলং, মধ্য জাফলং, পশ্চিম জাফলং, পূর্ব আলীরগাঁও, পশ্চিম আলীরগাঁও, রুস্তমপুর, লেঙ্গুড়া, ডৌবারি, তোয়াকুল, নন্দীরগাঁও, ও সদর ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। উপজেলার সদরের সঙ্গে জেলা শহরে যাতায়াতের দুটি সড়ক সারী-গোয়াইন ও সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া অবিরাম বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মানে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে চরম আকারে। তবে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টি অব্যাহত থাকলে হাওরাঞ্চলের মানুষজন পরিবার পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে বেকায়দায় পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে উপজেলার বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম।
ভারতের মেঘালয়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও সীমান্ত এলাকায় অতিমাত্রায় বৃষ্টি কারনে, দুই উপজেলাধীন ছোট বড় কয়েকটি বেড়িবাঁধ, অর্ধশত ব্রিজ ও কালবার্ড রয়েছে হুমকির মুখে।
এদিকে নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের চালিতা বাড়ি গ্রামের দুই সহোদর ভাই সকাল ৯ টায় বজ্রপাতে পতিত হয়ে একজন নিখোঁজ ও অন্যজন ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা চলিতা বাড়ির মনফর আলীর ছেলে আব্দুল হাসিম ও জাহাঙ্গীর আলম। এদিকে বিভিন্ন বসত বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় বয়স্ক, নারি ও শিশুদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভুগান্তি। অপর দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান পাটে পানি উঠায় উৎকন্ঠায় দিন পার করছে ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, গোয়াইনঘাটে এবারের বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কয়েক দফায় বন্যাকবলিত হয়। গত মঙ্গলবার রাতে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে জাফলংয়ের পিয়াইন নদ ও ডাউকি নদী দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হয়। অপর দিকে জৈন্তাপুরের সারী এলাকায় সারী নদীর পানি বেড়ে বাঘের সড়কের মুখ প্লাবিত হয়ে পড়ে। দুপুরের দিকে ওই সড়কের অন্তত ছয়টি স্থানে পানি উঠেছে। এতে সড়ক দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করে বলা হয়েছে গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। অতি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে পানি আরো বাড়তে পারে। হাওর এলাকায় বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি, অপ্রয়োজনে কাউকে বাইরে না থাকার অনুরোধও করা হয়েছে।
এদিকে গোয়াইনঘাটের বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ’র নির্দেশনায় ৪৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি শুকনো খাবারের ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার শ্যামল কুমার রায় জানান, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে, পুরো হিসাব এখনও বলা যাচ্ছে না। বিদ্যালয়গুলোতে চলমান পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যার পরিস্থিতি বিষয়ে আলাপ কালে গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রায়হান পারভেজ রনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় পরিদর্শন ও ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে বন্যা পরিস্থিতির সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে অতি মাত্রায় বৃষ্টির ও উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এবং আমরা সার্বক্ষণিক বন্যাকবলিত এলাকার খোঁজখবর নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারি করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, বন্যায় জনগণের দুর্ভোগ লাগবে জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ও শুকনো খাবারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।