স্টাফ রিপোর্টার :
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নগরী ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল আবারও বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। সুরমা নদীর পানি উপচে বিভিন্ন খাল ও ড্রেন দিয়ে ঢুকে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। এক মাসের মাথায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় কয়েক লাখ মানুষ। ডুবে গেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ। এদিকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা কবলিত এলাকা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন্যা কবলিত নগরীর তালতলা পয়েন্ট, কাজিরবাজার, শাহজালাল উপশহরসহ বেশ কিছু এলাকা এবং শহরতলীর মোগলগাঁও, কান্দিগাঁও, জালালাবাদ ও হাটখোলা ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এদিকে মানুষের জন্য জরুরী ত্রাণ সহায়তার জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান এমপির সাথে আলাপ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সাথে সাথে প্রতিমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন যতো দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব এসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে।
এর আগে গত মে মাসের মাঝামাঝি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে মহানগরীসহ জেলাজুড়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি সুরমা নদী উপচে নগরীর বাসাবাড়িতে প্রবেশ করে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। সেই সময়ে সিলেট নগরীর লাখো মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন। ওই দুর্ভোগের রেশ কাটতে না কাটতে নতুন করে বন্যার কবলে পড়েন নগরবাসী ও শহরতলীর মানুষ।
জানা গেছে, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় গতকাল বুধবার সকালেও কয়েক দফা ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে যেখানে হাঁটু পানি ছিল, সেখানে দেখা দিয়েছে কমরসমান পানি। বাড়িতে পানি ঢুকায় গবাদিপশু কোথায় রাখবেন, এ নিয়েও অনেক গৃহস্থ চিন্তায় রয়েছেন। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ, স্কুলের শিক্ষার্থীরা এবং ব্যবসায়ী। উপজেলার খাদিমনগর, খাদিমপাড়া, টুকেরবাজার, জালালাবাদ, মোগলগাঁও, কান্দিগাঁও, হাটখোলা ইউনিয়নের প্লাবিত। বিভিন্ন হাট-বাজার, মসজিদ, স্কুল-মাদ্রাসাসহ ভিটে বাড়ী পানিতে ডুবে গেছে। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রুত প্লাবিত এলাকায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছানোর দাবিও জানিয়েছেন। খাদিমনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল, মসজিদ, রাস্তাঘাট, ক্ষেত, বীজতলা। খাদিমপাড়া মুরাদপুর, সোনাপুর, মিরের চক, নয়া মসজিদ, মুক্তির চক, ধনকান্দি, পাচঘরি, কল্লোগ্রামের একাংশ, ইসলামাবাদ, বালুটিকর, বংশিধর, পলিয়া, দেওয়ানের চক, মাজরগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে। টুকেরবাজার, সাহেবেরগাঁও, চরুগাঁও, শেখ পাড়া, ওয়ার্ডের হায়দরপুর, পীরপুর, শাহপুর, ওয়ার্ডের টুকেরগাঁও, গরীপুর, শাহপুর, ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও, ওয়ার্ডের শাহপুর তালুকদার পাড়া, নওয়াপাড়া, মইয়ারচর, খুরুম খলাও। মোগলগাঁও ইউনিয়নের প্রায় ঘর-বাড়ী রাস্তাঘাট স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ঘোপাল, জাংগাইল, মিরপুর, গোবিন্দপুর, মিরের গাও, চামাউরাকান্দি, নীলগাঁও, নলকট। জালালাবাদ ইউনিয়ন, হাটখোলা ইউনিয়ন পানী বন্দি।
খাদিম নগর ইউনিয়নের কবির বলেন, ‘ঘর-দুয়ারে পানি। সন্তানদের নিয়ে অনিরাপদ অবস্থায় আছি। কাজে যাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলা স্পোর্টস একাডেমীর সভাপতি ইকলাল আহমদ বলেন, খাদিম নগর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত কিছু এলাকা গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিয়েছি। সরকারের পাশাপশি দেশ এবং প্রবাসে থাকা সকল বিত্তবানরা বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াই। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের এখন জরুরী ত্রাণের প্রয়োজন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত আজমেরী হক জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আমাদের মনিটরিং সেল থেকে ওই এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টায় কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৬২ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বিপদসীমা দু’ভাগে নির্ধারণ করা হয়েছে। বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বিপদসীমা ৭ দশমিক ৭৫ মিটার এবং জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিপদসীমা ১০ দশমিক ৪৫ মিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেঞ্চুগঞ্জ এরিয়ার গেজ রিডার গিয়াস উদ্দিন মোল্লা জানান, এরকম বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে চলে গিয়ে আবারও বন্যার হওয়ার আশংকা রয়েছে।