স্টাফ রিপোর্টার :
ওসমানীনগরের রাউতখাই গ্রামে প্রবাসীর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি জোরপূর্বক দখলচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন রাউতখাই গ্রামের মরহুম হাজী আব্দুল বারীর পুত্র ম্যানচেস্টার যুবলীগের সহসভাপতি মো. কামাল আহমদ। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ওসমানীনগর থানার মোল্লারপাড়া মৌজায় আমার বাবা মরহুম হাজী আব্দুল বারী ২০০২ সালে ১৫ শতক ভূমি ক্রয় করেন। বাবার মৃত্যুর পর সেখানে একটি ভবন নির্মাণ করি। শুরু থেকে বালাগঞ্জ থানার মজলিসপুর গ্রামের মো. সাজিদ আলীর পুত্র আব্দুল খালিক মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করতো।
কামাল আহমদ বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসে আদালতে মামলা দায়ের করি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০২১ সালের ২৬ আগষ্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ২৭ মে আব্দুল খালিকের নির্দেশে ওসমানীনগর থানার দশহাল গ্রামের মৃত আব্দুল গনির পুত্র মোস্তাক আহমদ ও তার স্ত্রী রুবি আক্তার, বালাগঞ্জ থানার রাজাপুর গ্রামের মো. গোফরান আহমদ জায়গীরদার ওরফে মাসুম ও একই থানার হুশিয়ারপুর গ্রামের মৃত আব্বাস উল্লাহর পুত্র সুন্দর আলী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ভূমিতে অনুপ্রবেশ করে। তারা ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় ভাড়াটিয়ারা উক্ত ভূমিতে আদালতের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ রয়েছে জানালে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ভাড়াটিয়াদের হুমকি-ধমকি, গালিগালাজ ও মারধর করতে থাকে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আব্দুল খালিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার ভাড়াটিয়া একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে সাজানো একটি অস্ত্র মামলা দিয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। সেদিনের ঘটনায় কামাল আহমদ বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। প্রতিপক্ষও উল্টো মিথ্যা ও সাজানো গল্প সাজিয়ে একটি মামলা দিয়েছে।
কামাল আহমদ আরও জানান, ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর আব্দুল খালিক ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভবন নির্মাণ করতে বাধা দেয় এবং চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা জায়গার ওপর স্থাপিত সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলে এবং অস্ত্রের মুখে তার নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি। একই কায়দায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আব্দুল খালিকের সহযোগী শামীম, মোস্তাক আহমদ, মো. গোফরান আহমদ, রাসেল, সুমন, মো. লতিফুর রহমান, মজনু মিয়া, ফরিদ আহমদ তার কেয়ারটেকার শাহীন মিয়ার ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তিনি বলেন, ‘গভীর রাতে বাসায় প্রবেশ করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে শাহীনকে রক্তাক্ত জখম করে। এ ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে কেয়ারটেকার শাহীন মিয়া আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।’
আব্দুল খালিক ও তার ভায়রা আবুল খয়ের যুক্তরাজ্য প্রবাসী এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আব্দুল খালিক ওয়েস্ট মিডল্যান্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং আবুল খয়ের লন্ডন যুবদলের সভাপতি। আবুল খয়ের লন্ডনে থাকাবস্থায় বাংলাদেশ হাইকমিশন কার্যালয়ে টানানো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি খুলে মাটিতে আছড়ে ফেলে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরকালে তাঁর গাড়িতে ডিম ছুঁরে মেরেছিল। এ ঘটনায় আমি প্রতিবাদ করায় তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আবুল খয়েরের নির্দেশে ২০১৮ সালের ১৬ আগষ্ট আমার ওপর এবং আমার সাথে থাকা লোকজনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে তার সহযোগীরা।’ এ ঘটনায় ওসমানীনগর থানায় ২০১৮ একটি মামলা দায়ের করেন কামাল। মামলায় আবুল খয়ের, মো. আবুল হোসেন, মো. খালিছ মিয়া, মো. হেলাল মিয়া, জিয়াউল রহমান ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়। কামাল আরও জানান, এই মামলায় আবুল খয়ের ৬ মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যায়। সে এখন পর্যন্ত আর দেশে ফেরেনি। পলাতক থাকায় বর্তমানে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘মামলার দুই নম্বর আসামি আবুল খয়েরের ভাই আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না।’
কামাল বলেন, ‘মামলার কারণে চার বছর ধরে যুক্তরাজ্য থেকে আমাকে দেশে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। বঙ্গন্ধুর ছবি অবমাননা ও প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার মামলার আসামিকে পুলিশ কেনো গ্রেফতার করছে না বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলের খতিয়ে দেখা দরকার।