কাজিরবাজার ডেস্ক :
ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, আলু, তুষ-খুদ-কুড়া, পোলট্রি ও ফিস ফিডসহ ১৯ পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এসব পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদেরকে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
একইসঙ্গে, পণ্যের প্যাকিংয়ে পাটের ব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। অপর এক রুলে পাটের ব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কেন মানা হচ্ছে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৪ জনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারিসহ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম জি সারোয়ার পায়েল, ইশিতা পারভীন ও আশিকুল হক।
আইনজীবী সুমাইয়া আজিজ বলেন, পাটের ব্যাগ বাধ্যতামূলক ব্যবহার সংক্রান্ত ২০১০ সালের একটি আইন আছে। যেখানে সব পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পরে ১৯টি পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯টি পণ্যের আমদানি, রপ্তানি, বিক্রিসহ সব ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। এই আইন অমান্য করে আসছে বিভিন্ন কোম্পানি। এ কারণে গত ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ জুট মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে থেকে অবহিত করণ চিঠি পাঠনো হয়। এর পরেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ২৩ মে প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন করার জন্যে নির্দেশনা চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। এর পরেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিটটি করা হয়।
ওই রিট আবেদনে বলা হয়, পাটের ব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত আইন যেহেতু বলবৎ আছে, তাই এখন থেকে যেন আইন অনুযায়ী পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটের ব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কেন মানা হচ্ছে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত নিত্যপণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটের ব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত আইন মানা হচ্ছে কি না- এ বিষয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট মুরগি ও মাছের খাবার সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। এরপর মুরগি ও মাছের খাবারসহ মোট ১৯টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত করা হয়। ওইদিন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য দেওয়া হয়।
আইন অনুযায়ী ছয়টি পণ্য- ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনির মোড়কে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুড়াসহ আরও ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
ওই আইন অনুযায়ী পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। এ অপরাধ দ্বিতীয়বার কেউ করলে সর্বোচ্চ দ-ের দ্বিগুণ দ-ে দ-িত করা হবেন।
আইনটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিবছর ১০০ কোটিরও বেশি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হবে। এতে স্থানীয় বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে পাট চাষিদের পাটের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এবং সর্বোপরি পাটের উৎপাদন বেড়ে যাওয়াসহ পাট শিল্প ও পরিবেশ রক্ষা পাবে।