আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রী ॥ দেশ বদলে গেছে, নিজস্ব অর্থায়নে ৯০ ভাগ উন্নয়ন করছি

9
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বক্তব্য রাখেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশের উন্নয়ন করছি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের ৯০ ভাগ উন্নয়ন নিজস্ব অর্থায়নে করছি। বাংলাদেশ আজ বদলে গেছে। পদ্মা সেতু একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সততা ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছি। নিজস্ব অর্থে করেছি এই সেতু। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব ইনশাআল্লাহ।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সভাপতির সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দলের জাতীয় ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আমরা সেটা ভুলে যাই না। প্রতিবার বাজেট ঘোষণার সময় সেই ইশতেহার হাতে নিয়ে কতটুকু অর্জন করতে পারলাম, কতটুকু আমাদের সামনে করতে হবে, সেগুলো বিবেচনা করে সেভাবেই বাজেট করি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করেছি। আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। পদ্মা সেতু একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সততা ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছি। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে তাঁর সরকার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে বলেই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। ২৫ জুন উদ্বোধন করব, ইনশাআল্লাহ।
পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির প্রশ্ন তোলে তিনি তখন সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। যা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডা কোর্ট তার রায়ে বলেছে পদ্মা সেতু নিয়ে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল, তার সবই ভুয়া ও মিথ্যা। এই সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে।
বাংলাদেশের সম্পর্কে কেউ কোন বিরূপ মন্তব্য করলে তাঁর নিজের কষ্ট হয় সেজন্যই বিশ্বব্যাংকের অভিযোগটি তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কষ্ট লাগাটা স্বাভাবিক কারণ এদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা তাঁর সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সন্তান হিসেবে বাবাকে তাঁরা খুব একটা কাছে পাননি। তাই এই স্বাধীন দেশে আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখন প্রধান কাজই হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস এটা করেছে শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদের জন্য। ৭১ বছর বয়স পর্যন্ত ড. ইউনূস বেআইনীভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থেকেছে। এ নিয়ে মামলা করে সে হেরে যায়। বিশ্বব্যাংক তার কথায় ফান্ড বন্ধ করে দেয়। পরে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করি। দেশের ৯০ ভাগ উন্নয়ন নিজস্ব অর্থায়নে করছি। বাংলাদেশ আজ বদলে গেছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তেই তাঁর এই ক্ষমতায় আসা। কিন্তু ‘অপবাদ’ দিতে চেয়েছিল আর সততার শক্তি ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছিলাম। এই একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল নয়, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে। আজকে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থা দুঃখজনক ছিল। কারণ ক্ষমতা তো জনগণের হাতে ছিল না। ক্ষমতা চলে গিয়েছিল সেই মিলিটারি ডিক্টেটকদের হাতে। উর্দী পরে ক্ষমতা দখল করত। যার ফলে দেশের উন্নয়ন না হয়ে তারা তাদের উন্নয়ন করেছে। ১৯/২০টা ক্যু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, সেশনজট ছিল।’
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মসিউর রহমান, রাজীউদ্দীন আহম্মেদ রাজু, কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, এ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির, খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী, অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হুদা, রশিদুল আলম, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, এ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দিন চুপ্পু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ১৫ আগষ্টের শহীদ এবং প্রয়াত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। এরপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এটাই ছিল এককভাবে প্রথম কোন পূর্ণাঙ্গ বৈঠক। এর আগে ২০২০ সালে ৩ ও ৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর মহামারী করোনার কারণে প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও উপদেষ্টা পরিষদের আলাদা কোন বৈঠক করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।