কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করেছেন আপীল বিভাগ। আত্মসমর্পণ না করে কিভাবে হাইকোর্ট এ মামলা শুনলেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন আপীল বিভাগ। শত বছরের নজির ভেঙ্গে জোবায়দার মামলা গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট; যা অবৈধ এবং সংবিধান লঙ্ঘন। বুধবার জোবায়দার দুর্নীতি মামলার ১৬ পাতার রায় প্রকাশ করেন আপীল বিভাগ।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, এ মামলার রায় বের হয়েছে। সেখানে আপীল বিভাগ বলেছেন, জোবায়দা রহমান পলাতক অবস্থায় মামলা আমলে নেয়ার আগেই হাইকোর্টে করেছে। সেটা হাইকোর্টে শুনানি গ্রহণ করা উচিত হয়নি। কারণ সকল নাগরিক সমান বিচার পাবার অধিকারী। এ ক্ষেত্রে জোবায়দারটা শুনে কোর্ট আইনসিদ্ধ কাজ করেননি। হাইকোর্টের ওই রায়ের একটা প্যারা বাতিল করে দিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের দুর্নীতি মামলা চলবে বলে গত ১৩ এপ্রিল রায় দেন আপীল বিভাগ। কিন্তু সেই রায়ের কোন ব্যাখ্যা সেদিন দেননি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। জোবায়দা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপীল বেঞ্চ বলেন, শত বছরের নজির ভেঙ্গে জোবায়দার মামলা গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট; যা অবৈধ এবং সংবিধান লঙ্ঘন।
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে আপীল বিভাগ বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান বলা হলেও জোবায়দা রহমানকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এদিকে ২০০৮ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ না করে কিভাবে হাইকোর্ট এ মামলা শুনলেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন আপীল বিভাগ। পলাতক আসামি দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে কোন আবেদন করতে পারবে না উল্লেখ করে আপীল বিভাগ বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই পলাতক হিসেবে গণ্য হবেন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা। হাইকোর্টের দেয়া আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দার আত্মসমর্পণের আদেশ বাতিল করেন আপীল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগ লিখিত রায়ে বলেছেন, পলাতক আসামির মামলা শুনে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে আইন বহির্ভূতভাবে জোবায়দাকে দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত সুবিধা।
এ ছাড়া হাইকোর্টের দেয়া আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দার আত্মসমর্পণের আদেশ বাতিল করেন আপীল বিভাগ। পলাতক আসামি দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে কোন আবেদন করতে পারবে না উল্লেখ করে আপীল বিভাগ বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই পলাতক হিসেবে গণ্য হবেন জোবায়দা রহমান। ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিকানা ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় এই মামলা দায়ের করে দুদক। সে মামলায় তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান ও শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। পরে ২০০৭ সালে জোবায়দা রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি মামলা বাতিলের প্রশ্নে রুলও জারি করেন আদালত। এরপর জোবায়দা রহমানের মামলা বাতিলের প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে ২০১৭ সালে ১২ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জোবায়দা রহমানকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেন আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদন করেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান। এক-এগারোর সরকারের সময় গ্রেফতার হয়ে মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান তারেক রহমান। এখনও তিনি সেখানেই রয়েছেন। জোবায়দা রহমানও লন্ডনে অবস্থান করছেন।