প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারী

7

বোরোর ভরা মৌসুমেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেন বাড়ছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রীসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে কঠোর মনোভাব পোষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি। পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য নয়। সেই কারণেই বিষয়টি মাঠপর্যায়ে তদারকি করে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন চালের আমদানিকারক, মজুদদার, চাতাল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতি। ভোজ্যতেলের মতো চালের বাজারেও নিত্য অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ অধিদফতর ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি। মজুদদারদের ধান-চালের স্টক পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ মজুদের সময়সীমা ঠিক আছে কিনা, তা দেখার জন্যও বলেছেন। কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নীতিমালার বাইরে গিয়ে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল কিনে তথাকথিত ব্র্যান্ডিংয়ের নামে বেশি দামে বাজারজাত করছে। ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন তাদের বিরুদ্ধেও। এসব দেখার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য সচিব, খাদ্য সচিব ও কৃষি সচিবকে। ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে সংশ্লিষ্টরা। জনসাধারণের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রীর এই কঠোর নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হলে চালের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে নিশ্চয়ই।
সরকার তথা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ সত্ত্বেও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দিশেহারা করে তুলছে। বর্তমানে মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৮-৬০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। বাজারে মিনিকেট-নাজিরশাইল নামে যেসব চাল বিক্রি হয় সেগুলো প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা। কাটারিভোগ, চিনিগুড়া, কালোজিরা প্রতিকেজির দাম শতাধিক। চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতাসহ ১৫টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও চাঁদাবাজির। পশুখাদ্য, বেকারি আইটেম এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্যও চালের বাড়তি ব্যবহার হচ্ছে। তবে বোরোর ফলন আশাব্যঞ্জক হলেও মূলত ব্যবসায়ী, মিল মালিক, আড়তদার ও আমদানিকারকদের কারসাজিতে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি বাড়াতে সরকার শুল্ককর ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করলেও ব্যবসায়ীরা তেমন উৎসাহিত হননি। অর্থাৎ পর্যাপ্ত চাল আমদানি করেননি তারা। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা শুল্ককর ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, সরকার যদি তাদের দাবি মেনেও নেয় তাহলে কি ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত চাল আমদানি করে দেশের অভ্যন্তরে দাম কমানোর উদ্যোগ নেবেন? সেই নিশ্চয়তা কোথায়? মনে রাখতে হবে যে, বর্তমানে চলছে বোরোর ভরা মৌসুম। সরকারের খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক, প্রায় ১৩ লাখ টন। তবু কেন বাড়ছে চালের দাম? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত এবং সরকারের মজুদ থেকে চাল বিক্রিসহ আমদানি বাড়ানো হলে চালের দাম অচিরেই সহনীয় হয়ে উঠবে বলেই প্রত্যাশা।