স্টাফ রিপোর্টার :
ওসমানীনগরের বুরুঙ্গা ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের মন্তাজ আলীর মেয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মিনা বিবির প্রতারণা, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার যুবক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। বিয়ে বিচ্ছেদ চাওয়ায় তাকে নানাভাবে হয়রানি ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় মিনা বিবির কবল থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন যুবক। রবিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাজপুর ইউনিয়নের রবিদাশ সোনারপাড়া গ্রামের রূপা মিয়ার পুত্র রাজু আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘মিনা বিবি যিনি একজন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। যুক্তরাজ্য নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেন বড় অঙ্কের টাকা। পরে তাদের উপর দায়ের করেন মিথ্যা মামলা। আমিও একজন মিনা বিবির প্রতারণার শিকার।’
রাজু বলেন, ‘মিনা বিবি যুক্তরাজ্য নেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন বড় অঙ্কের টাকা। এ কাজে তিনি নিজের মেয়েকেও ব্যবহার করছেন। বিয়ে দেওয়ার নামে আদায় করে নেন বিশাল অঙ্কের টাকা। প্রতারণা বুঝতে না পেরে মিনা বিবির ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেক নিরীহ মানুষ।’
তিনি বলেন, ‘আমি পেশায় একজন মাইক্রোবাস চালক। ২০০৮ সালে মিনা বিবি ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে আমার গাড়ি ভাড়া নেন। গাজীপুরে গাড়ি পৌঁছলে র্যাবের একটি দল গাড়ি থামানোর ইশারা দেয়। রাত তখন তিনটা বাজে। এ সময় মিনা বিবি গাড়ি থেকে নেমে র্যাব সদস্যের সাথে ইংরেজিতে কথা বলেন। র্যাব আমাদের গাড়ি ছেড়ে দেয়।’
মিনা বিবি প্রতারণার মাধ্যমে রাজুকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন বলে দাবি তার। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে র্যাব গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পার আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলামÑ র্যাবের সঙ্গে আপনার কী কথা হলো? তখন তিনি জানান- র্যাব আমাদের পরিচয় জানতে চেয়েছিল। তিনি বলেছেন আমরা স্বামী-স্ত্রী। কাবিননামা দেখতে চেয়েছিল, সিলেটে আছে বলে জানিয়েছেন। এজন্য সিলেট গিয়ে তিনদিনের মধ্যে কাবিননামা র্যাব অফিসে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই সিলেটে গিয়ে তিনদিনের মধ্যে কাবিননামা তৈরি করতে হবে। আমাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন।’
রাজু বলেন, ‘মিনা বিবির সাথে আমার বয়সের ব্যবধান অনেক। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাকে বিয়ে করতে হয়। ২০০৮ সালের ২ আগস্ট সিলেট নগরের হাওয়াপাড়াস্থ কাজী অফিসে আমাদের বিয়ে সম্পাদন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মিনা বিবির নানা প্রতারণার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে আমার চোখে ধরা পড়ে মিনা বিবির আসল রূপ। জানতে পারি আমি মিনা বিবির ১১তম স্বামী। তার আগের দশ স্বামীর মধ্যে চারজনের নাম জানতে পেরেছি। তারা হলেন- মিন্টু মিয়া, রইছ আলী, জামাল মিয়া ও জলিল মিয়া। এমনকি মিনা বিবির আমার বয়সী এক কন্যা রয়েছে। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।’
রাজু বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে তার কিছু জমি বিক্রি করতে আমাকে বলেন। জমির টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করার পরামর্শ দেন। সরল বিশ্বাসে আমি তার কথায় জায়গার উপর ‘বিক্রয় হবে সম্বলিত’ সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখি। গত জানুয়ারি মাসে ১২ শতক জমি বিক্রি করি। মিনা বিবি ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে এলে জায়গা বিক্রির নগদ টাকা তার হাতে তুলে দিই।’
পারিবারিক অশান্তি ও স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ করে রাজু মিনা বিবির সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ চাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, ‘দেশে আসার পর তার পূর্বের এক স্বামী মিন্টু মিয়ার চাচাতো ভাইর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আপত্তি জানানোর কারণে আমাকে জেলে ঢুকানোর হুমকি দিয়েছেন। বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বলায় আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি এবং প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখান। তখন জানতে পারি তার দেওয়া পাওয়ার অব এটর্নি ছিল জাল। আমাকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে এমনটা করেছেন।’ বিচ্ছেদ চাওয়ায় এখন প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকিতে রাজু নিজে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন বলে জানান। আগের স্বামীরা একইভাবে প্রতারণা, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন জানিয়ে তিনি সেই পুনরাবৃত্তি থেকে বাঁচতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।