স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে চাঞ্চল্যকর রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এই মামলার বাদি ও নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
বুধবার দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ মো. আব্দুর রহিমের আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন তিনি। এদিন রায়হানের মা সালমা বেগম এবং চাচা শ^শুরের সাক্ষ্য দেয়ার কথা থাকলেও তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নওশাদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, গতকাল কেবল মামলার বাদি সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু আসামিপক্ষ প্রস্তুতি না থাকার কারণ দেখিয়ে তাকে জেরা করেননি। আদালতে তাদের একদিনের সময় দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বাদীকে জেরা করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। তিনি বলেন, গতকাল আরও দুজন সাক্ষী প্রদানের কথা থাকলেও আসামির জেরা সম্পন্ন না হওয়ায় তাদের সাক্ষ্য হয়নি। আজ জেরার পর হতে পারে।
এর আগে গত মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও এক আইনজীবীর মৃত্যুতে তা পিছিয়ে যায়।
বুধবার সাক্ষ্য গ্রহণকালে এই মামলার আসামি বরখাস্তকৃত উপ পুলিশ পরিদর্শক আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ ৫ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
পিপি জানান, রায়হান হত্যা মামলায় হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন তৎসহ ৩০২ দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারা ও ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আসামিপক্ষ শুধুমাত্র হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলাটি চালাতে চান। এজন্য অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে গেছেন। তবে হাইকোর্টের কোন নির্দেশনা না থাকায় আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন, রায়হান হত্যা মামলায় ৬৯ জন ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয়েছে। আমরা যথাসময়ে সব সাক্ষীকে আদালতে হাজির করবো।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল সিলেট মহানগর দায়রা জজ মো. আবদুর রহিমের আদালতে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে রায়হান হত্যা মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ভোরে নগরীর আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির প্রথমে তদন্ত করে পুলিশ। পরে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)’র কাছে। গত বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় তাদের ৫ জনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত অপরজন কথিত সাংবকাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান, যার বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে। এই ৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযুক্ত ৫ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও নোমান এখনও পলাতক রয়েছেন। তিনি বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক আবুল মোমেন রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
এদিকে, পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ময়না তদন্ত রিপোর্টে তার শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। রায়হান হত্যাকান্ড নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে পালিয়ে যান এসআই আকবর। পরে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ভারতের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ।