কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ভারতের নাগরিকদের জন্য নাগরিকত্ব আইন তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য এই আইন নয়, তা সে হিন্দুই হোক বা মুসলমান। একথা সংসদে বলা হয়েছে। দেশের ১৩০ কোটি মানুষের জন্য এই আইন নয়। তিনি আরও বলেন, এনআরসি, কংগ্রেসের আমলে তৈরি হয়েছিল। বিজেপি তা বানাইনি। তাহলে দোষ দেওয়া হচ্ছে কেন। বাচ্চাদের মতো করে বোঝানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি হচ্ছে।
এদিকে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে যখন উত্তাল গোটা দেশ। দল-মত নির্বিশেষে মিছিলে হেঁটেছেন অসংখ্য মানুষ। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার দিল্লীর রামলীলা ময়দানে জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, সংশোধনী নাগরিকত্ব আইনকে ঘিরে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন বিরোধীরা। আর বিরোধীদের মধ্যে আলাদা করে তিনি নিশানা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
রামলীলা ময়দানে বিরোধীদের মিথ্যে প্রচারকে জোরদার নিশানা করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, শহরের কিছু পড়াশোনা করা মানুষ ও নকশালরা রটাচ্ছে, দেশের মুসলিমদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। যে কোনও একজনকে প্রশ্ন করুন কোথায় রয়েছে ডিটেনশন সেন্টার, বলবে, সবাই বলছে তাই শুনছেন। এসব কংগ্রেস ও আরবান নকশালদের প্রচার। এসব প্রচারে বিশ্বাস করেই রাস্তায় নেমে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে কিছু লোক।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ-হিংসায় উত্তপ্ত দরিয়াগঞ্জের থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে রামলীলা ময়দান। রবিরার দুপুরে সেখান থেকেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচার শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে, বিজেপির জনসভার সেই মঞ্চ কার্যত হয়ে উঠেছে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ।
দেশবাসীকে ওই দুই আইন নিয়ে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের যন্ত্রণা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপরে কী ধরনের অত্যাচার হয় তা গোটা বিশ্ব জানে। সেখানে এখনও কোনও সংখ্যালঘু চায়ের দোকানে চা পান করলে চায়ের ভাঁড়ের দাম দিতে হয়। সেই ভাঁড়ও ঘরে নিয়ে যেতে হয়। এরা যখন এদেশে এসে তাঁদের কথা বলেন তখন তাঁদের কথা শুনতে হবে।
শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারী সম্পর্কে জনসভার শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, যে মানুষটি পাকিস্তান থেকে আসছেন তিনি ভারতে এসে কোনও সরকারি দফতরে গিয়ে বলেন, পাকিস্তান থেকে এসেছেন, সাহায্য করুন। কিন্তু এই কাজ কোনও অনুপ্রবেশকারী বলেন না। তিনি দেশের নিঃশব্দে জনগনের সঙ্গে মিশে যান। এখনও অন্য দেশ থেকে আসা ওইসব নিপীড়িত মানুষদের আশ্রয়ে দেওয়া উচিত কি উচিত নয়, আপনারাই বলুন। এদের আশ্রয় দেওয়া কথা বলেছিলেন খোদ মহাত্মা গান্ধী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও এদের জন্য সুপারিশ করেন। তাহলে এই সরকার নাগরিকত্ব আইন এনে কী দোষ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে রামলীলা ময়দানের জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, সংসদে দাঁড়িয়ে একসময় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর আর শরণার্থীদের জায়গা দিতে বলতেন, মমতা দিদি। আর আজ তিনি কলকাতা থেকে পৌঁছে গেছেন রাষ্ট্রসংঘে।দিদি, এখন কী হয়েছে আপনার, কেন বদলে গিয়েছেন প্রশ্ন তুলে বলেছেন, নির্বাচন আসে-যায়, বাংলার মানুষকে ভরসা করুন।বাংলার বাসিন্দাদের আপনি শত্রু ভেবে ফেলেছেন। শুধু তাই নয়,নরেন্দ্র মোদির অভিযোগ,বাংলায় সেনা নিয়মমাফিক কাজ করতে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ করে বলেন, মোদির সেনা এসেছে।
প্রথম থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও এনআরসি নিয়ে প্রতিবাদ করে আসছেন মমতা। পথে নেমেছেন বারবার। চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় কোনওভাবেই নাগরিকত্ব সংশোধনী এবং এনআরসি কার্যকর হবে না। সেই বিষয়টি তুলে ধরেও কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বলেছেন,রাজ্য করবেন না বলার আগে একবার অন্তত আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলুন। জানুন, এটা কি আদৌ করা যায়? কেন করছেন এমন? শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক ভিডিয়ো তৈরি করে অশান্তি ছড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জোরের সঙ্গে বলেছেন, তিনি গরীবের জন্য কাজ করা মানুষ, যা করেছেন সেখানে কোনও বৈষম্য দেখেন না। কার কী ধর্ম, কী জাত, কবে কোথা থেকে এসেছেন এসব কিছুই জানতে চাননি।