অনেক দিন পর এবার ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা অনেকটাই ছিল নির্বিঘ্নে। নাড়ির টানে শহর ছেড়ে ঘরে ফেরার আনন্দ ছিল ঝঞ্ঝামুক্ত। যানজট কিংবা পরিবহন সঙ্কটের তীব্রতা ছিল না দেশের কোথাও। দীর্ঘ ছুটি এবং সরকারী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছে ঘরে ফেরা মানুষের স্বস্তির ঈদযাত্রা। রেলস্টেশন, লঞ্চ ঘাট এবং বাস স্ট্যান্ডগুলোতে চাপ থাকলেও শৃঙ্খলা দেখা গেছে সকল ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ ট্রেন যথাসময়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে গেছে। যানজট না থাকায় বাসও চলাচল করেছে সময় ধরে। রেল স্টেশন কিংবা বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার চিরচেনা দৃশ্য চোখে পড়েনি। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ফেরিঘাটগুলোতে কিছুটা ভোগান্তি হলেও ছিল সহনীয়। লঞ্চ চলাচল ছিল নির্বিঘ্ন। এবার সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও ছিল কম।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি প্রতি বছরের একটি নিয়মিত ঘটনা। দুই ঈদে পরিবহন সঙ্কট এবং যানজটে বরাবরই ঘরে ফেরা মানুষের ঈদযাত্রা দুর্বিষহ করে তোলে। এর মূল কারণ সরকার এবং বেসরকারী পরিবহনগুলোর পক্ষে একযোগে এত মানুষকে পরিবহন সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। চালকের অসচেতনতা ও রাস্তায় অতিরিক্ত পরিবহনের চাপে সৃষ্টি হয় যানজট। কোন কোন বছর ১২/১৬ ঘণ্টা রাস্তায় কাটিয়ে ঈদের দিন ভোরে বাড়িতে পৌঁছার ঘটনাও ঘটেছে। ঈদে মানুষের নির্বিঘ্ন ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও খুব একটা কার্যকর হয়নি। গত দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের মধ্যেও মানুষের ঈদযাত্রা ছিল ভোগান্তির। এবার পাল্টেছে সেই দৃশ্যপট।
বেশ কয়েকটি কারণে এবার দুর্ভোগ কমেছে ঘরে ফেরা মানুষের। প্রধানত, সাপ্তাহিক ছুটি, মে দিবস ইত্যাদি মিলিয়ে ঈদের ছুটি ছিল লম্বা। ঈদের কয়েকদিন আগেই মানুষ শহর ছাড়তে শুরু করে। ঈদের একদিন আগে ছুটি শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই পরিবহনের ওপর সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত চাপ। বিনষ্ট হয় সড়কের শৃঙ্খলা, সৃষ্টি হয় যানজট। এবার যানজট কবলিত সড়কগুলো সংস্কার করা হয়েছে বেশ আগে। অনেক মহাসড়ক রূপান্তর হয়েছে চার লেনে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে তৈরি হয়েছে উড়াল সেতু। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে সতর্ক অবস্থান। এসব কারণে রাস্তায় যান চলাচল ছিল নির্বিঘ্ন। যানজটমুক্ত স্বাভাবিক চলাচলের কারণে যানবাহনগুলো যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে। আবার ফিরে এসে যাত্রী নিয়ে ছুটতে পেরেছে গন্তব্যে। সময়ের তুলনায় অন্যান্য বছরের চেয়ে যাত্রী পরিবহন করতে পেরেছে অনেক বেশি।
এবার বড় আশঙ্কা ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক নিয়ে। বিআরটি প্রকল্পের কাজের জন্য গত ৭/৮ বছর ধরে এই সড়কে স্বাভাবিক সময়েও লেগে থাকে যানজট তীব্র। এ কারণে ঈদ যাত্রায় এবার এই সড়কে ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা করা হয়েছিল। প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে সেই আশঙ্কা দূর করে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহন চলাচল করেছে। এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এমন সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে আগামীতে বদলে যাবে ঈদে ঘরে ফেরার চিরায়ত দুর্ভোগের চিত্র।