দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হউক

13

দেশের হাওরাঞ্চলগুলোতে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থা-লুটপাট-স্বজনপ্রীতি সর্বোপরি স্থানীয় রাজনীতি এখন ওপেন সিক্রেট। যে কারণে হাওরবাসীর দুঃখ-কষ্ট দুর্ভোগ কমছে না কিছুতেই। বরং আরও বেড়েছে। কেননা, প্রতিবছর চাষের আওতায় বেড়েছে জমি ও ধানচাষের পরিমাণ। সেখানে এখন উচ্চফলনশীল ধানের চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে একফসলি ধানই কৃষকের প্রধান ভরসা। বর্ষাকালে মৎস্য চাষ এবং অন্য সময় শাকসবজি তরিতরকারি ইত্যাদির আবাদ চলে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রধান আলোচ্য বিষয় হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট। অনেক আগে হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হলেও সেটির অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘাড়ে। সেখানেও ঘটে পদে পদে দুর্নীতি। ঠিকাদারদের দিয়ে বাঁধ নির্মাণের অপচেষ্টা চলে। নিয়মিত নজরদারি ও তদারকির অভাব প্রকট। ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের সব হাওরে শতভাগ ফসল তলিয়ে যায় অকাল বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে। হাওরবাসীর দুঃখ ও হাহাকার সামাল দিতে ছুটে যান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ঘরে ঘরে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি ঠিকাদারী প্রথা বাতিল করে গঠিত হয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বা পিআইসি। শুরু হয় নতুন করে দুর্নীতি-অনিয়মের মহোৎসব। স্থানীয় রাজনীতি, সুবিধাভোগী ও প্রভাবশালীদের নিয়ে গঠিত হয় পিআইসি। নামকাওয়াস্তে মাটি ফেলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়া চলে নিজেদের মধ্যে। এতে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় প্রশাসনও। অতঃপর সিন্ডিকেট গঠন করে শুরু হয় অবাধ লুটপাট। আর প্রতি বছর বাঁধ ভেঙ্গে ভেসে যায় হাওড়বাসীর কষ্টার্জিত সোনালি ফসল।
হাওর অঞ্চলে আকস্মিক পানি বৃদ্ধি, পাহাড়ী ঢল ও বন্যার জন্য ভঙ্গুর ফসল রক্ষা বাঁধই দায়ী প্রধানত। যার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম সর্বোপরি পিআইসির ব্যাপক দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা। এসব অবিলম্বে বন্ধ করা না গেলে হাওরবাসীর দুঃখ-কষ্ট দূর হবে না কোনদিন। সে অবস্থায় সুবিস্তৃত হাওর অঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে টেকসই করে গড়ে তোলা জরুরী ও অত্যাবশ্যক। প্রায় প্রতিবছর হাওরবাসী কৃষকের দুঃখ-কষ্ট-দুর্ভাগ্যের জন্য যে বা যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়াও আবশ্যক।