মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সকল শংকার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাম্পার বোরো ফসল কৃষকদের গোলায় উঠেছে। বর্তমানে জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুধু ধান আর ধান। ধান কাটা, মাড়াই করা, মাঠে শুকানো ও গোলায় তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী ও শ্রমিক-জনতা।
জানা গেছে, এবার জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওর সহ ছোট-বড় ১২টি হাওরে ২০ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়। জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জমি আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করেন। বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয় সার-বীজ সহ সরকারি কৃষি উপকরণ। দেয়া হয় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা। সব মিলিয়ে সবার প্রচেষ্টায় জমিতে বাম্পার বোরো ধান উৎপাদন হয়।
এর মধ্যে এপ্রিলের শুরুতেই নদ-নদীতে ঢলের পানি বৃদ্ধি পেয়ে হুমকির মুখে পড়ে যায় বোরো ধান। তখন হাওরে সবেমাত্র কাঁচা থোড় ধান। ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওর তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জেলাজুড়ে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অতিরিক্ত পানির চাপে হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধগুলোতে ফাটল দেখা দেয়। চারদিকে মাইকিং করে বাঁধ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয়রা। নদীতে পানি হাওরে কাঁচা ধান। এমতাবস্থায় ধান তোলা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এ বিপদজনক সময়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি নিজে সকল সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, পিআইসি কমিটি ও স্থানীয় কৃষক-জনতাকে সাথে নিয়ে দিনরাত বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন। সেই সাথে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান মজুমদার, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল, সাবেক চেয়ারম্যান হারুন রাশীদ সহ অনেক সচেতন মানুষ দিনরাত মাঠে ছিলেন। অবশেষে সকলের প্রাণপন প্রচেষ্টায় সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওর সহ বড় হাওর গুলোর ধান রক্ষা হলেও ছোট ছোট ৬টি হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। নদীতে অতিরিক্ত পানি হওয়ায় মাটির কাঁচা রাস্তা ডুবিয়ে হাওরে পানি ঢুকে পড়ায় কিছু ক্ষতি হয়েছে।
২৬ এপ্রিল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, হাওরে ধান কাটা ও মাঠে ধান শুকানোতে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা। এ সময় কৃষক আছলম আলী সহ স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে বলেন, কিছু জমির ধান পানিতে ক্ষতি হলেও উপজেলাজুড়ে বাম্পার বোরো ফসল কৃষকদের গোলায় উঠছে। এতে কৃষক-কৃষাণীর মুখে আনন্দের হাসি ফুটেছে। নলুয়ার হাওর পাড়ের ইউনিয়ন চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, জগন্নাথপুরে ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ধান শুকিয়ে গোলায় তোলা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান মজুমদার জানান, ছোট ৬ হাওরে পানিতে প্রায় ২০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতি হয়েছে। তা পরিমাণে অল্প হলেও ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না। যদিও প্রশাসন সহ সকলের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। এছাড়া উপজেলার সবস্থানে বাম্পার বোরো ধান কৃষক ভাইদের গোলায় উঠেছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাই প্রাণপন চেষ্টা করেছেন। সকলের সহযোগিতায় বাঁধ রক্ষা হয়েছে। ফলে কৃষকদের গোলায় উঠেছে তাদের কষ্টার্জিত সোনার ধান। এতেই আমাদের সকল কষ্ট স্বার্থক হয়েছে।