কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আজ ভোট। প্রায় ৬০ লাখ ভোটার এই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ নগরপিতা নির্বাচিত করবেন। এর মধ্যে ঢাকায় দীর্ঘদিন পর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন ভোটাররা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে তিন সিটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যেই এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে ভীতি রয়েছে। একজন মেয়রসহ ঢাকার ৩৪ কমিশনার প্রার্থী আত্মগোপনে রয়েছেন। কয়েকজন প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে ঘরবন্দি করে রাখা এবং শত শত পোলিং এজেন্টকে ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি ও গ্রেফতার আতংকের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ তিন সিটির নির্বাচন। প্রার্থীদের ঘর থেকে বের হতে না পারা এবং ভোট পরবর্তী নির্যাতন হবে- এমন হুমকিতে প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার মতো পরিস্থিতিতেও নির্বাচন কমিশনের নির্বিকার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের বাধার কারণে অনেক প্রার্থীই পোলিং এজেন্ট দিতে পারছেন না। সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রত্যাশা করা হলেও প্রচারণার শেষ দিনেও অনেক প্রার্থী মাঠে নামতে পারেননি। মন্ত্রী-এমপি ও ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা নিত্যদিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের পদে পদে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ২০ দল সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের হুমকি-ধমকি এবং কর্মী সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে আগাম বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং আসামি ধরার নামে পুলিশ প্রার্থীদের বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। অন্যদিকে কর্মী-সমর্থকদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পাড়া-মহল্লায় কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রচার করছেন কোথাও পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই করার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষের নেতাকর্মীরা অঞ্চলভেদে ভোটারদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে গেলে বাড়িঘরে ফিরতে দেয়া হবে না এবং পরে মামলা মোকদ্দমায় জড়ানো হবে- এমন ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচন হলেও সবার দৃষ্টি তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, প্রভাবশালী দেশ আমেরিকা-বৃটেনসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো তিন সিটি করপোরেশনের ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন সে পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন। ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিক এবং সারা দেশের মানুষের দৃষ্টিও সিটি নির্বাচনের দিকে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ব্যানারে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তাই এবার রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন পরিচয়ে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছে। আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ঢাকা উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চট্টগ্রামে বিএনপি সমর্থিত মনজুর আলম মেয়র পদে লড়ছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে। অন্যদিকে ঢাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে সহস্র নাগরিক কমিটির নামে। এই ব্যানারে মেয়র পদে লড়ছেন ঢাকা উত্তরে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনিসুল হক ও দক্ষিণে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন। চট্টগ্রামে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এবারের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৬ মেয়রপ্রার্থী, ২৮১ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৯ সংরক্ষিত সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৯৩টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮৯২টি। মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৪ হাজার ৭০১ জন। নারী ভোটার ১১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৩ জন। উত্তর সিটিতে মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১৮ হাজার ৭৬৯ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এক হাজার ৯৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা পাঁচ হাজার ৯২ জন ও পোলিং কর্মকর্তা ১১ হাজার ৭৮৪ জন। দক্ষিণ সিটিতে ২০ মেয়র প্রার্থী, ৩৯০ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৭৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৮৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা চার হাজার ৭৪৬টি। মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ২৮৬ জন। নারী ভোটার আট লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭ জন। এ সিটিতে মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১৫ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৮৮৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চার হাজার ৭৪৬ জন ও পোলিং অফিসার নয় হাজার ৪৯২ জন। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ১২ মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৩ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭১৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা চার হাজার ৯০৬টি। মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ জন ও নারী ভোটার আট লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন। চট্টগ্রামে মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৩৭ জন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৭১৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চার হাজার ৯০৬ জন ও পোলিং কর্মকর্তা নয় হাজার ৮১২ জন। আজ ২৮শে এপ্রিল তিন সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। দুই সিটিতে এক হাজার ৯৮২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর ২০টি স্থান থেকে ঢাকার দুই সিটির জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, স্টিকার, গার্নি ব্যাগ, অমোচনীয় কালি-কলম, অফিসিয়াল সিল, ব্রাশ সিল ও প্যাড সংগ্রহ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য আটটি স্থান থেকে গতকাল সকাল ১০টা থেকে নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ভোটের সামগ্রী বুঝে নিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণে সকাল ১০টা থেকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচনের সরঞ্জাম বিতরণ শুরু করেছেন। বিকালের মধ্যেই কেন্দ্রগুলোতে এসব সরঞ্জাম পৌঁছে যায়। ভোট নির্বিঘœ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮২ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ৪৭৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৬ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ক্যান্টনমেন্টে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে।