কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের স্বজনদের বাড়িঘরে চড়াও হয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সহ কয়েকজনকে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহতের ঘটনায় আবারো আলোচনায় এসেছে কানাইঘাট লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিভিন্ন মামলার আসামী তোতা মিয়া ও তার ভাইয়েরা। এ ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামের হারুন রশিদের বসত বাড়িতে।
তোতা মিয়ার নেতৃত্বে হামলার ২ মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র সমালোচনা চলছে। সচেতন মহল দ্রুত তোতাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এ ঘটনায় তোতা মিয়া, তার ছেলে ও ৩ ভাই সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় গত বুধবার রাতে মামলা এফ.আই.আর করা হয়েছে। থানার মামলা নং- ১৬, তারিখ- ১৪/০৪/২০২২ইং।
মামলার অভিযোগ ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, তোতা মিয়া গংরা স্থানীয় বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামের ইনছান আলীর কতেক ভূমি জবর দখলের পাঁয়তারা করলে ইনছান আলী বাদী হয়ে তোতা মিয়া গংদের বিরুদ্ধে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে ১৪৪ ধারায় বিবিধ মামলা নং- ৩০/২২ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে গত বুধবার দুপুরের দিকে থানার এএসআই মোখলেছুর রহমান কয়েকজন পুলিশকে সাথে নিয়ে তদন্ত করতে যান। তদন্তকালে পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানে উপস্থিত হয়ে তোতা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা ইনছান আলী ও তার স্বজনদের উপর হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ নিবৃত্ত করে সেখান থেকে তোতা মিয়া গংদের সরিয়ে দিয়ে থানার উদ্দেশ্যে চলে আসেন। এক পর্যায়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তোতা মিয়ার নেতৃত্বে তার ছেলে, ভাইয়েরা সহ স্বজনরা দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইনছান আলীর বসত বাড়িতে ঢুকে অতর্কিত হামলা করে। নির্বিচারে হামলাকারী ইনছান আলীর বসত ঘরে ঢুকে নারী-পুরুষ সহ পরিবারের সদস্যদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও রড, রুইল দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে পিটাতে শুরু করে। হামলাকারীদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে ইনছান আলীর পরিবারের লোকজন পুকুরে ঝাঁপ দেন। বসত ঘরে ঢুকে পড়লে সেখানে গিয়ে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। হামলার হাত থেকে বাঁচতে কান্না-কাটির শোরচিৎকারে শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে তাদের প্রাণে রক্ষা করেন। এ সময় হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৬০), শ্যালক হারুন রশিদ (৫৮), তার ভাই জয়নাল আবেদীন (৩৭) ও জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী শাকিরা বেগম (৩৩)। আহতদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় হারুন রশিদ, শাকিরা বেগমকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মরিয়ম বেগম, জয়নাল আবেদীন সহ অন্যান্য আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবকেও শারীরিক ভাবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারপিট করা হয়।
হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যান এএসআই মখলিছুর রহমান সহ কয়েকজন পুলিশ। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে হামলাকারী পুলিশের উপরও চড়া হয়।
এ ঘটনায় আহত হারুন রশিদের ছেলে আব্দুল কাদির বাদী হয়ে তোতা মিয়া সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ঐ দিন রাতে কানাইঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।
এদিকে হামলার দুই মিনিটের একটি ভিডিও বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিশেষ করে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাথে জড়িত অনেক নেতাকর্মী আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন মামলার আসামী ও সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী জমি জবর দখলকারী বিভিন্ন সময়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনকারী সহ অসংখ্য অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তোতাকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবী জানিয়ে পোস্ট করছেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, তোতা মিয়া সীমান্ত এলাকার চোরাচালন ব্যবসার সাথে জড়িত এবং চোরাচালানীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। তার পরিবারের সদস্যরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় সব-সময় সন্ত্রাসী স্টাইলে চলাফেরা করে এবং বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে।
তবে থানায় তোতা সহ ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা এফআইআর হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ হামলার নেতৃত্বদানকারী তোতাকে বা মামলার কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে এলাকায় পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। এ হামলাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের পদ-পদবী ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করলে রেহাই পাবে না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোতা মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও পরিবারের স্বজনদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরো বলেন, এ ব্যাপারে দুর্নীতিবাজ ও বিভিন্ন ঘটনার সাথে জড়িত তোতা মিয়ার বিরুদ্ধে আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নিব এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার গ্রহণের জন্য সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।