লবণে আয়োডিনের ঘাটতি

10

লবণ প্রতিদিনের রান্না এবং খাদ্যবস্তুর একটি অপরিহার্য উপাদান। লবণ বেশি খেলে যেমন শরীরের ক্ষতি হয়, উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়, তেমনি লবণ না খেলেও চলে না। পরিমিত মাত্রায় প্রতিদিন সামান্য লবণ গ্রহণ মানব শরীর ও জীবজগতের জন্য অত্যাবশ্যক। আপাতত মানুষের জন্য লবণের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই আলোকপাত করা যেতে পারে। সবচেয়ে উপযোগী ও স্বাস্থ্যকর লবণ হলো রক সল্ট বা পাথুরে লবণ, যা পাওয়া যায় হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে। তবে এর দাম বেশি ও দুষ্প্রাপ্য। অতঃপর ভরসা অফুরন্ত সমুদ্র ভা-ারের লবণ বা সী সল্ট। এর উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং জোগানও অফুরাণ। তবে এই লবণেও অবশ্যই স্বল্পমাত্রা আয়োডিন যুক্ত করা চাই। তা না হলে গলগন্ড রোগসহ শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রতিকেজি লবণে মাত্র ৫০ পয়সার আয়োডিন মিশ্রণ থাকলেই চলে। তবে এর জন্য আধুনিক লবণ পরিশোধন কারখানা অত্যাবশ্যক। সম্প্রতি লবণে আয়োডিন মেশানো নিয়ে দেখা দিয়েছে সমূহ সঙ্কট। অভিযোগ আছে, বাজারের অধিকাংশ লবণে আয়োডিনের মিশ্রণ নেই। বিশেষ করে বিখ্যাত সব নামী-দামী কোম্পানির ব্রান্ডের লবণ ব্যতিরেকে। ছোট ও মাঝারি লবণ কারখানার মালিকদের অভিযোগ, তারা গত কয়েক মাস ধরে চাহিদামতো আয়োডিন পাচ্ছেন না বিসিকের কাছ থেকে। ফলে আয়োডিন মেশাতে পারছেন না লবণে।
দেশে আয়োডিন আমদানি ও বাজারজাত করে থাকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা, বিসিক। কি কারণে এবং কিভাবে এই দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তাদের ওপর, তা বোধগম্য নয়। যেমনটি হয়েছে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের ক্ষেত্রে। যা হোক, বিসিকের কর্মকর্তারা আপাতত আয়োডিন ঘাটতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। দেশে আয়োডিনের চাহিদা প্রতিবছর প্রায় ৬০ মেট্রিক টন। যা কয়েক দফায় আমদানি করা হয় ব্রাজিল, চীন ও ভারত থেকে। বর্তমানে শুধু ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে আয়োডিন। অবশ্য এটি ব্যাহত হয়েছে করোনা অতিমারীর কারণে। দেশে ভোজ্য লবণের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন। এনালগ পদ্ধতিতে ১৫ টন লবণে প্রয়োজন হয় ১ কেজি আয়োডিন, যার দাম প্রতিকেজি ৩ হাজার টাকা। ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে পরিশোধিত ১৯ টন লবণে লাগে ১ কেজি আয়োডিন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি লবণ কারখানার মালিকদের অভিযোগ, যা সত্যও বটে, মাত্র ৭-৮টি বড় কোম্পানি একসঙ্গে বিপুল পরিমাণে আয়োডিন কিনে নেয়ায় বর্তমানে দেশীয় বাজারে সৃষ্টি হয়েছে আয়োডিন সঙ্কট। ফলে আয়োডিন মিশ্রিত লবণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তাশ্রেণী। অন্যসব ভোগ্যপণ্যের মতো এখানেও যুক্ত হয়েছে সিন্ডিকেটের অসাধুতা ও আধিপত্য। এই চক্রটি প্রতিবছর বিশেষ করে ঈদুল আযহায় বিপুল পরিমাণে শিল্পলবণ বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট আমদানি করে থাকে কোরবানির কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য। ফলে সে সময়ে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হয় এবং বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। প্রতিবছর এহেন জনদুর্ভোগসহ লবণের দাম বৃদ্ধিতে একদিকে যেমন ভোক্তাশ্রেণী ঠকে থাকে, তেমনি ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত থেকে যায় দেশীয় লবণ চাষীরা, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারি আবশ্যক।