কাজিরবাজার ডেস্ক :
আকস্মিক ঢলে হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সরকার থাকবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। আগামী আউশে এ কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার কর্মসূচী নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান। কৃষিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন উপস্থিত ছিলেন।
উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাওরে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সোমবার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
হাওরে কতটুকু বোরো ধান নষ্ট হয়েছে-জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও সেই সময় হয়নি। এখন মেঘ আকাশে, আমি কৃষিমন্ত্রী হিসেবে সব সময়ই একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকি, আমাদের চিন্তিত করে। প্রকৃতির ওপর তো আমাদের হাত নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদেও আলোচনা করেছি, এমনিও যোগাযোগ রাখছি। তিনি বলেছেন, দেখো, প্রস্তুতি রাখো যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। দুদিনে অস্বাভাবিকভাবে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, আবার ১৪-১৫ তারিখে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সেই বৃষ্টি যদি আল্লাহ সরিয়ে নেন বা কোন পরির্তন হয়- এটাই আমরা আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘বোরোতে প্রতিবছর আমাদের ২ কোটি টন ধান উৎপাদন হয়, এরমধ্যে ১২ লাখ টন হয় হাওড়ে, যেটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে ১২ লাখ টনও বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। এটা আপনাদের জানা দরকার।’
হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের প্রণোদনা আছে। ওখানে আমন ওইভাবে হয় না, একটাই ফসল। আমরা ইতোমধ্যে কর্মসূচী নিয়েছি আউশে প্রণোদনা দেয়ার জন্য। ক্ষয়ক্ষতি মেটানোর জন্য অবশ্যই চাষীদের পাশে এ সরকার থাকবে।’
সারের ডিলারদের অনিয়ম বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা এমন হয়। এ মুহূর্তে সার নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। আমি মিটিংয়ের আগেও অনেক চাষীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে কোন অনিয়ম হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ সারের জন্য মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে, রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। কাজেই এখানে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি ৩০ হাজার কোটি টাকা। ইউক্রেনের যুদ্ধ, সবকিছু মাথায় রেখে বাজেট আসতেছে। সারে ভর্তুকি বাড়ানোর বিষয়ে এখনও সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই। তাহলে তো এ ৩০ হাজার কোটি টাকারই একটা সংস্থান রাখতে হবে। এটা থেকে তো পেছানোর সুযোগ নেই।’
কৃষিমন্ত্রী জানান, এ মুহূর্তে দেশে সারের কোন সঙ্কট নেই। মজুদও আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি আছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে দীর্ঘক্ষণ পর্যালোচনা করেছি সার নিয়ে। আমাদের এ মুহূর্তে সারের কোন সঙ্কট নেই। আমাদের প্রতিবছর ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সার প্রয়োজন। টিএসপি সাড়ে ৭ লাখ টন, ডিএপি সাড়ে ১৬ লাখ টন, এমওপি সাড়ে ৭ লাখ টন লাগে। আজ পর্যন্ত আমাদের মজুদে কোন সমস্যা হয়নি। এ পর্যন্ত টিএসপি, এমওপি ও ডিএপির মজুদ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি আছে। ইউরিয়া যেটুকু প্রয়োজন সেটাই আছে।
তিনি বলেন, সামনে কি হবে সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। গতবছর (২০২১ সালে) আমাদের যেটুকু চাহিদা ছিল সেটুকুই নির্ধারণ করেছি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবছরই অর্থবছরের শেষে আমরা আগামী অর্থবছরের জন্য কি পরিমাণ সার প্রয়োজন সেটি নির্ধারণ করি। এ বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য এমন নীতি বা কৌশল নেবো, যাতে করে কৃষি উৎপাদন কোন বাধা সৃষ্টি না হয়। সার নিয়ে আমাদের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সার না পেয়ে ১৯৯৫ সালে ১৮ জন কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। তারা কোন সাহায্য চায়নি, তারা শুধু ন্যায্যমূল্যে সার চেয়েছিলেন, এজন্য তাদের রক্ত দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে একটি হলো কৃষি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষির গুরুত্ব আগেও ছিল আগামীতেও থাকবে। দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের জীবিকা কোন না কোনভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। এজন্য সারের বিষয়টি অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখি। প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশ দিয়েছেন, সার ব্যবস্থাপনায় যাতে কোন সমস্যা না হয়। সার নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা হয়নি।’
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, কৃষির উৎপাদন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে, কোনক্রমেই যেন আমরা বিদেশের ওপর নির্ভরশীল না হই।
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মতিয়া চৌধুরী ও কমিটির সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম, কৃষি সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলাইকৃষ্ণ হাজরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।