শ্রীমঙ্গলে প্রতিবছর খরা মৌসুমে কাগজি লেবুর চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়তি

6

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
শ্রীমঙ্গল লেবু চাষী ও আনারস মালিক শাহেদ আহমদ বলেন, এখন খরা মৌসুম লেবুর উৎপাদন কম। মূলত বর্ষাকালে লেবু উৎপাদন বেশি হয়। খরা মৌসুমে বাগানে উৎপাদন কম থাকায় লেবুর বাজারদর প্রতিবছর এই সময়ে একটু বেশি থাকে। কারণ সেচ পাম্প দিয়ে লেবু গাছে পানি দিতে হয়। এতে খরচও বেশি হয়। আর পবিত্র রমজান মাসের বাড়তি চাহিদা থাকায় বাজার দর আরও বাড়তি রয়েছে। রমজানের আগে প্রতি পিস কাগজি লেবু সর্বোচ্চ সাইজ ৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মূলত আমরা যারা লেবু বাগানের মালিক লেবু চাষ করে থাকি, আমরা তেমন দাম পাই না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও এলাকার লেবু বাগান মালিক নাজমূল হাসান বাবুল বলেন, লেবুর দাম তেমন নাই। প্রতি বছর এই মৌসুম, রোজা ও কোরবানির ঈদেই লেবু ও আনারসের দাম একুট ভালো পাওয়া যায়। তবে লাভের বড় অংশ চলে যায় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের পকেটে।
শ্রীমঙ্গল নতুনবাজারের আড়তদার আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের আড়তে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার লেবু বাগানের কাগজি লেবু আসে। তাছাড়া শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি এলাকার কাগজি লেবু আড়তে বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা আসে আমার আড়তে।
আব্দুল মালেক এর আড়তের ম্যানেজার নির্মল দাস বলেন, বুধবার আড়তে কাগজি লেবু ছোট সাইজ ২ টাকা, মিডিয়াম সাইজ ৩ টাকা, আর বড় সাইজ ৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, বাজার একটু ডাউন, রেইট কম। ৫/৬ দিন আগে বেশি দামে কাগজি লেবু বিক্রি হচ্ছে। খুচরা দাম আরো বেশি, মিডিয়াম সাইজ হালি ৪০ টাকা, বড় সাইজ হালি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
লেবু ছাড়াও পাহাড়ি টিলার রসালো আনারস ৩০-৩৫ টাকা, বড় সাইজ ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে রমজান মাস উপলক্ষে লেবু ও আনারসের চাহিদা একটি বেশি থাকায় দামও বাড়তি।
লেবু পাইকার গোলাপ মিয়া, শ্রীমঙ্গল লেবু বেশি ঢাকা কাওরান বাজার, শনির আখড়া ও ডেমরা এলাকা বস্তায় ভর্তি করে গাড়িযোগে নিয়ে সেখানে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
মৌলভীবাজার জেলায় শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও জুড়ী, কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি টিলা ভূমিতে বেশির ভাগই কাগজি লেবু এবং আদা লেবু আবাদ হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। সেখানকার পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে লেবুর দাম বিশাল ব্যবধান রয়েছে।
(৬ এপ্রিল) বুধবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়ত থেকে লেবু বের হয়ে খুচরা মার্কেটে বিক্রি হয় ছোট সাইজ ৫ টাকা পিস। মিডিয়াম সাইজ প্রতি পিস ৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। ৮ টাকা দামের লেবু প্রতি পিস ১০-১২ টাকা বিক্রি এবং ১০ টাকা দামের লেবু ১৫ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হয়।
প্রতিদিন ভোরবেলায় প্রত্যন্ত টিলা এলাকা থেকে ঠেলাগাড়ি ও জিপ গাড়িযোগে কাগজি লেবু, আনারস ও কলা নিয়ে আড়তে ভিড় করেন চাষিরা। সেই লেবু আড়তদাররা পাইকারী হাকডাক করে বিক্রি করেন। এরপর বস্তায় ভর্তি করে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।
শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সাধারণ সম্পাদক হাজী কামাল হোসেন ও সদস্য আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, বর্তমানে লেবুর মৌসুম না থাকায় লেবুর কিছুটা দাম বেশি থাকে। ডিপ টিউবওয়েল থেকে মোটর পাম্পের মাধ্যমে পানি দিতে হয় লেবু গাছে। তাতে খরচ বেশি, উৎপাদনও কম। শ্রীমঙ্গল নতুন বাজারে প্রতিদিন অনারস ও কলা এবং কাগজি লেবুসহ পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত ফসল প্রায় কোটি দেড় কোটি টাকার ক্রয় বিক্রয় হয়।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় টিলায় টিলায় কাগজি লেবুর ফলন বেশি হয়। লেবুর সিজন মে মাস থেকে শুরু হয়। মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে কাগজি লেবু চাষ হচ্ছে। গত বছর উৎপাদন ছিল ২৭ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন। তারমধ্যে কাগজি লেবু বেশি ফলন হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলায়।