পার্লামেন্টই ভেঙ্গে দেয়া হলো, ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ॥ ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পাকিস্তানে কয়েকদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার আপাতত সমাপ্তি ঘটেছে। সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রবিবার সাবেক এই ক্রিকেট তারকার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবের আগেই পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন প্রেসিডেন্ট ডক্টর আরিফ আলভী। ফলে এ যাত্রায় রক্ষা পেলেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা। ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর গদিতে থাকবেন ইমরান খানই। অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। বিষয়টি নিয়ে তারা সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নয়া পাকিস্তান গড়ার ডাক দিয়ে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন ইমরান।
এদিকে পাকিস্তানে চলমান এসব নাটকীয় ঘটনায় দেশটির সেনাবাহিনীর কিছুই করার নেই বলে জানানো হয়েছে। রবিবার পাক আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল বাবর ইফতেখার বলেন, চলমান ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা একেবারেই নেই। সামরিক বাহিনী এসবের সঙ্গে যুক্ত নয়।
রবিবার অধিবেশন শুরু হলে পাক ডেপুটি স্পীকার কাসিম সুরি ইমরানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করেন। তিনি বলেন, এই প্রস্তাব দেশের সংবিধান বিরুদ্ধ ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। ডেপুটি স্পীকারের এ ঘোষণার পরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান। তিনি বলেন, সরকার পতনের জন্য চক্রান্ত চলছিল। তা ভেস্তে দেয়া হয়েছে। জনগণই পাকিস্তানের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবেন। কোন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা বিদেশীরা নয়। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক পথেই দেশের শাসন চলবে। বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
এই অনাস্থা ভোট সামনে রেখে দেশটির বিরোধী শিবির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নামও ঘোষণা করে। পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, পার্লামেন্টে ইমরান খান ধরাশায়ী হবেন। এ পদে আমরা মুসলিম লীগ-এন নেতা শাহবাজ শরীফের প্রতি সমর্থন জানাব। তবে ইমরান খান শেষ পর্যন্ত লড়াই করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থাকব। ইমরান খানের সাবেক স্ত্রীও বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পাক তারকা খেলোয়ারের সমালোচনা করেন। এক টুইট বার্তায় রেহাম খান বলেন, হ্যাঁ, আপনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে আপনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তখন পাকিস্তান মহান ছিল।
অনাস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার আত্মবিশ্বাস নিয়েই রবিবার অধিবশনে অংশ নেন বিরোধী আইনপ্রণেতারা। অনাস্থা ভোটে ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে ১৭২ ভোট প্রয়োজন ছিল বিরোধীদের। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাবে ১৭৪ আইনপ্রণেতার সমর্থন ছিল।
ইমরানের বিরুদ্ধে এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে রবিবার ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ইসলামাবাদের উপ-কমিশনারের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেড জোন এলাকা বড় কন্টেইনার এবং কাঁটাতার দিয়ে সিল করে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ পর পাক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াত চৌধুরী বলেন, সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। তিনি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের করা আগের দাবিগুলোর কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পদক্ষেপের পেছনে বিদেশী ষড়যন্ত্র ছিল। পাক তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গত ৭ মার্চ আমাদের রাষ্ট্রদূতকে একটি বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল যেখানে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। বৈঠকে জানানো হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পেশ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা প্রস্তাব আনার একদিন আগেই এই ঘটনা ঘটেছিল। ২০২২ সালের ৮ মার্চ অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরান খানের জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার ঘোষণা দেয় পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে তোলার কথা ছিল।
ইমরান খানকে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ চলছে, এমন তথ্য রয়েছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। এ অবস্থায় ইমরান খানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি পাক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হত্যার একটি পরিকল্পনা সামনে এসেছে। এমন রিপোর্টের পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নিরাপত্তা জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে, ক্ষমতাসীন তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ফয়সল ফাওয়াদ দাবি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে এবং তার জীবন নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তুরস্কের সঙ্গে আলোচনা পাকিস্তানের : তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে কথা বলেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। রবিবার পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে ফোনে কথা হয় তাদের। তুর্কী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ কথা স্বীকার করেছে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের আগে কথা হয় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। ওই ভোটে ইমরান খান পরাজিত হতেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন যার মানে দেশটিতে এখন আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।