সিয়াম সাধনার মাস

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মুসলিম জাহানে সর্বত্র এখন রোজার মৌসুম- রমজান মাস। আজ আমরা এর দ্বিতীয় দিবস অতিবাহিত করছি। ইমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য রমজানের সিয়াম পালন করা। এটি মূলত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার হুকুমবরদারি করা। কিন্তু এরপরও এ মাসের সিয়াম সাধনার ফলে রোজাদার ইহ-পরকালে বহুবিধ আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এ মাসে দিনভর উপবাসব্রত পালন ইফতার ও সেহেরি অনুষ্ঠান, তারাবি ও তিলাওয়াত প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রে মু’মিনদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলিয়ান করে তোলে এবং এ সবের বরকত ও উপকারিতা তাদের দু’জাহানে সৌভাগ্যমণ্ডিত করে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন :
হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর দেয়া হয়েছিল- যাতে তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।’ বস্তুত আয়াতে বর্ণিত পরহেজগারি বা তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। রমজান মুসলিম দুনিয়ায় নানা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে সে বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্য অর্জনের আশীর্বাদ নিয়ে আসে। হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, এ মাসে কোন লোক যদি কোন নফল ইবাদত করে তবে তার সাওয়াব বা শুভফল হবে অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। আর এ মাসের একটি ফরজের সাওয়াব অন্যান্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সাওয়াবের সমতুল্য। এ মাস ধৈর্যের। আর ধৈর্যের প্রতিদানই হলো জান্নাত। এ মাস পরস্পরের মধ্যে সহানুভূতি প্রকাশের। এ মাসে মু’মিনের রিজিক বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে তার গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং তাকে দোযখ থেকে নাজাত দেয়া হবে, রোজাদারের রোজার সমান সাওয়াবও পাবে তবে রোজাদারের সাওয়াবের কোন কমতি হবে না..।’
পরকালীন পুরস্কার আর খোদার দিদারই নয় শুধু রোজার মাসের আশীর্বাদ। রমজানের মর্মবাণী আদর্শ সমাজ, আদর্শ জীবন গঠনেও এক অপরিহার্য প্রশিক্ষণ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। রমজান মানুষকে ত্যাগ শেখায়, সুখ-দুঃখের অনুভূতি জাগায়। বলা হয়েছে রমজানে যখন কোন ব্যক্তি গায়ে পড়ে ঝগড়ায় আসে তখন যেন বিণীতভাবে রোজাদার আরজ করে : ছুমতু লির রাহমান… ভাই আমি যে রোজাদার! দয়াময় প্রভুর নামে মৌনতা অবলম্বন করেছি, সুতরাং আজ তর্কাতর্কি নয়, নয় বাড়াবাড়ি…।’ ইসলামের এ শিক্ষা, রমজানের এ দর্শন বাকি এগারো মাসে প্রতিফলিত করা গেলে সমাজের চেহারায় নিশ্চয় স্বর্গীয় আবরণযুক্ত হবে। যারা আত্মনিবেদন করে সিয়াম পালন করে তাদের দ্বারা মানুষ ক্রমাগত উপকৃত ও আশ্বস্তই হবে। হুজুরে পুর নূর (স.) ইরশাদ করেছেন : এ মাসের প্রথম ভাগ আল্লাহর রহমত, মধ্যম ভাগ আল্লাহর ক্ষমার সময় এবং শেষভাগ দোযখ হতে পাপীতাপীদের মুক্তিদানের…। সে হিসেবে আমরা এখন রমজানের প্রথম ভাগে। রমজানের যে বহুমুখী আশীর্বাদ ও কল্যাণকর বিষয়সমূহ কুরআন হাদিস ও ইসলামের সোনালি ইতিহাসে দেখতে পাচ্ছি, আমরা তা থেকে কতটুকু ফায়দা অর্জন করতে পারি তাই এখন বিবেচনার বিষয়।
এ মাসে তারাবি নামাজ আদায় সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে : যে ব্যক্তি পূর্ণ ইমান ও ভক্তি সহকারে পুণ্য লাভের মানসে রমজানে ক্বিয়াম বা তারাবি নামাজ ইত্যাদি পড়ে তার পূর্ববর্তী পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। সেহেরি বা শেষ রাতের খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান রোজাদারের সুবিধার্থে প্রবর্তিত হলেও এ মাসের সেহেরি অনুষ্ঠানকে ও ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। সাহাবী আনাস (রাদি:) আঁ-হযরতের (স.) উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন : তাসাহহারূ ফাইন্না ফিসসুহুরি বারাকাহ। – তোমরা সাহরি খেয়ো, কারণ এটি বরকতের ব্যাপার।
আসুন, সূচনা থেকেই আমরা এ মাসের নানাবিধ বরকত ও প্রশিক্ষণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি এবং এসব শিক্ষায় উজ্জীবিত করি আমাদের সন্তান ও স্ত্রী পরিজনদের।