স্টাফ রিপোর্টার :
দিন দিন দ্রব্যমূল্য ও মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বাড়ছে না। চাকরির অনিশ্চয়তার পাশাপাশি জটিল রোগে আক্রান্ত হলে একেবারে অসহায় হয়ে তাদের পরিবার। বেতনের পরিমাণও একেবারে নগণ্য।
এ পরিস্থিতিতে ইমামদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জালালাবাদ ইমাম সমিতি, সিলেটের নেতারা। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
গ্রাম-শহরের প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে মসজিদের ইমাম, খতিব ও মোয়াজ্জিনদের পক্ষ থেকে কিছু উত্থাপন করেছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির নেতারা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, বাসাবাড়ির ভাড়া, যাতায়াত খরচ ও চিকিৎসা খরচসহ সবকিছুই ঊর্ধ্বমুখী। ধনী, গরিব, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা সময়ে সময়ে বাড়ানোহয়। কিন্তু ইমাম-মোয়াজ্জিনদের মাসিক সম্মানি ভাতা যুগ-চাহিদার তুলনায় অতিনগণ্য। অনেকের ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতোও নয়। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সব মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।
দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের জন্য বাসা ভাড়া বাবদ একটি মাসিক ভাতা চালু করা এবং মাসিক সম্মানি ভাতা পরিমাণ দুই ঈদের বোনাস প্রদান করা। সমাজে সুবিধাবঞ্চিত, জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত ইমাম মোয়াজ্জিনগণের পাশে দাঁড়ানো। মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং নীতিমালা অনুযায়ী ইমামকে পদাধিকার বলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অথবা গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে রাখা। এতে শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সিদ্ধান্তের ঘটনা ঘটবে না। এছাড়াও দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কমপক্ষে ইমামের জন্য ফ্যামেলি কোয়ার্টারের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।
ইমাম সমিতির নেতারা সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ‘সিলেটে রমজান মাসে সাহরি ইফতারের সময়সূচি নিয়ে বিভিন্ন ক্যালেন্ডারের সময়সূচিতে গরমিল লক্ষ্য করা যায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এই বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে জালালাবাদ ইমাম সমিতি গত মার্চ মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সিলেটের বিভাগীয় পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে। একাধিক বৈঠক করে আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে সিলেটে এক ও অভিন্ন ক্যালেন্ডার ছাপানোর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এতে সিলেটবাসী এবার সাহরি ও ইফতারের সময় ভিন্ন ভিন্ন আওয়াজ শুনতে হবে না।’
রমজান মাসকে সামনে রেখে তারা কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে, মাহে রমজানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর একটি সমন্বিত পুস্তিকা এবং পরবর্তীতে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ। মাসব্যাপি বয়স্ক কুরআন শিক্ষা প্রদান (প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা), সিলেট অঞ্চলের জন্য সমিতির ইফতা বোর্ড কর্তৃক ফিতরা নির্ধারণ করা, রমজানে চার জুমআয় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা। এর মধ্যে প্রথম জুমআয় কুরআনের ফজিলত, দ্বিতীয় জুমআয় যাকাতে সম্পর্কে, তৃতীয় জুমআয় এতেকাফ সম্পর্কে এবং চতুর্থ জুমআয় ঈদুল ফিতর ও ফিতরা সম্পর্কে।
জালালাবাদ ইমাম সমিতির নেতারা মাহে রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখা এবং দিনের বেলা সব হোস্টেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে জনসচেতনতা তৈরির আহ্বান জানান। খাদ্যদ্রব্য ও বিভিন্ন জরুরি পণ্য সুলভ মূল্যে বা অল্প মুনাফায় বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতিও আহ্বান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দীন আহমদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মাওলানা শরীফ উদ্দিন ও মাওলানা সাঈদ আহমদ, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ জৈন্তাপুরী, অর্থ সম্পাদক মাওলানা বদরুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মুনিব, মাওলানা সিরাজ উদ্দিন আনসারী, মাওলানা বিলাল আহমদ, লেখক শামসীর হারুনুর রশীদ, মাওলানা মুফতী মাহফুজ আহমদ, মাওলানা মুজজাম্মিল হক তালুকদার, মাওলানা আজির উদ্দীন জিহাদী প্রমুখ।