কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তিনবার গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে বলেছেন, তাঁর সরকার গণতন্ত্রকে নিরাপদ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। পরপর তিনবার একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল, যে কারণে আমরা বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করতে পেরেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আগামীতে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের নবনির্মিত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১২তলা ভবন ‘বিজয়-একাত্তর’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্রকে সুরক্ষা এবং দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, যাতে জনগণ ন্যায়বিচার পায়। আমাদের যেন কারো কাছে হাত পেতে চলতে না হয়, আমরা যেন নিজেরাই নিজেদের উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে ইনশাআল্লাহ গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব।
রাজধানীর সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের নবনির্মিত ১২তলা ভবনের একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং এ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দীন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ গোলাম সারোয়ার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি এবং বিশিষ্ট আইনজীবীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিচার বিভাগের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্যাতিত নারী, শিশু এবং এসিড হামলার শিকারসহ সকলে যাতে সুবিচার পায় আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিচার বিভাগের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ করেছে এবং বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে এবং সংবিধানের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী সরকারগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়ার জন্য বিচারপতিদের সাধুবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, এই রায়ে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ৯০ শতাংশ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিজস্ব অর্থায়নে করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তার সব থেকে বড় দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিজেদের অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতুর মতো একটা বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছি। এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জনগণকে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
এ প্রসঙ্গে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের সরকার দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু করে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দায়মুুক্তি দিয়ে পুরস্কার হিসেবে তাদের বিদেশী মিশনসমূহে নিয়োগ দেন এবং একইসঙ্গে জেল থেকে মুক্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাদের নির্বাচন করার অধিকার দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধের দায়ে কারাগারে বন্দী বা সাজাপ্রাপ্ত এমনকি ৭ খুনের আসামি সাজাপ্রাপ্ত তাদেরও মুক্তি দিয়ে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল জিয়া। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াও স্বামীর পথ অনুসরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের রায় দেয়ায় নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিচারকদের সাহসী ভূমিকার কারণে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি এবং রায় বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তাঁর ছয় বছরের জোরপূর্বক নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর দেশের ফেরার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে তখন এমনকি তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের হত্যাকান্ডের জন্য একটি মামলা দায়ের করতেও পারেননি। পাকিস্তানী স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পথ ধরে জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসেন। আর জিয়াউর রহমানের পথ ধরে ক্ষমতায় আসেন এরশাদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়ার শাসনকালে প্রায় ১৯/২০ বার অভ্যুত্থান ঘটে এবং এর শিকার হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনগণ। তিনি প্রয়োজনীয় আইন চালুসহ অবকাঠামো নির্মাণ, বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাক এবং জনগণ ন্যায় বিচার পাক।
সরকারপ্রধান বলেন, সরকার বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশন সম্পূর্ণ করতে তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। দেশজুড়ে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে তাঁরা একটি ‘ল ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই ইউনিভার্সিটির জন্য একটি যথাযথ শিক্ষানীতি প্রণয়নে বিচারক ও আইনজীবীদের সহায়তা প্রয়োজন হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে তিনি অর্থমন্ত্রীকে আদালত সংক্রান্ত নথি নিরাপদে রাখতে একটি রেকর্ড রুম তৈরিতে অর্থ বরাদ্দ দিতে বলেছেন। তিনি হার্ডকপি ও সফটকপি নথি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে তাদের একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সারাদেশের আইনজীবীদের জন্যে আরও ভাল ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে, যেরকম ৬৪টি জেলা আদালতের সব আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সরকার আইনজীবীদের জন্য বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, যারা বিচার চাইতে অপারগ তাদের আইনী সেবা দিতে সরকার ‘দ্য লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস এ্যাক্ট- ২০০০’ প্রণয়ন করেছে।
সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বাধাবিপত্তি মোকাবেলা করে তাঁর সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে। জাতির পিতার স্বপ্নের মতো ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সকলের সহযোগিতাও চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।