কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বিরুদ্ধে নাঈম এ. চৌধুরীর দায়েরকৃত ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলা খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালত।
বুধবার (৩০ মার্চ) ওই আদালতে মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয় বলে বৃহস্পতিবার তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার।
২০২১ সালের ১৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নাঈম এ. চৌধুরী বিটিআরসি এবং বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ভিওনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় নাঈম এ. চৌধুরী নিজেকে বিটিআরসি থেকে পিএসটিএন লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপারেটর ওয়ার্ল্ডটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের একজন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে দাবি করেন। ওই বছরের ৮ মার্চ বিটিআরসির তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নাঈম এ. চৌধুরী দাবি করেন যে, উক্ত নিলামের কারণে তার প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ কারণে তিনি বিটিআরসি এবং ভিওনের বিরুদ্ধে ক্ষতিপুরণ দাবি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে উক্ত মামলা দায়ের করেছেন।
বিটিআরসি জানায়, ওই নিলামে ১৮০০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম ব্যান্ড ভিওনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বাংলালিংক এবং অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
মামলাটি একই বছরের ২১ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে ১ অক্টোবর বিটিআরসি মামলাটি খারিজের জন্য আদালতে একটি আবেদন দাখিল করে। আবেদনে বলা হয়, সার্বভৌম দায়মুক্তি আইন অনুযায়ী বিটিআরসির বিরুদ্ধে নাঈম এ.চৌধুরীর দাবিগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সোভরেইন ইমুউনিটিস অ্যাক্ট (এফএনআইএ) বিদেশি সার্বভৌম দায়মুক্তি আইন অনুযায়ী বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ব্যতীত একটি বিদেশি রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের বিচারিক এখতিয়ার থেকে মুক্ত থাকবে।
বিটিআরসি জানায়, বুধবার (৩০ মার্চ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টের বিচারক জন পি ক্রোনানের আদালত বিটিআরসি’র আবেদন মঞ্জুর করেন এবং মামলাটি উক্ত আদালতের এখতিয়ারের বহির্ভূত হওয়ায় তা খারিজ করে দেন। তিনি আদেশে উল্লেখ করেন যে, বিটিআরসি বাংলাদেশের একটি সংবিধিবব্ধ সংস্থা হিসাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের সার্বভৌম দায়মুক্তির আওতায় পড়ে এবং বিটিআরসি যুক্তরাষ্ট্রের এফএনআইএ এর অধীনে একটি বিদেশি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। যেহেতু বিটিআরসি মামলার দায় থেকে মুক্ত, সেহেতু বাদী কর্তৃক আনীত অভিযোগ সংশোধনের সুযোগ নেই। ফলে বিটিআরসির মামলা সম্পূর্ণ খারিজ হয়ে গেছে।
মামলার অপর বিবাদী ভিওনের বিষয়ে নাঈম এ. চৌধুরী যদি একটি সংশোধিত অভিযোগ দায়ের করতে চান এবং মামলাটিতে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী হোন, তবে বাদীকে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে৷ যদি বাদী সেই তারিখের মধ্যে অভিযোগ সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়, তবে আদালত ভিওনের মামলাটি খারিজ করার পাশাপাশি এই মামলার রায় দেবেন।
বিটিআরসি এক বিবৃতিতে বলছে, এই রায় বিটিআরসির জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক। এটি নজির স্থাপন করলো যে, বিটিআরসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সার্বভৌম দায়মুক্তি আইনের অধীনে একটি সার্বভৌম সত্ত্বা হিসাবে বিবেচিত হবে। এই মামলা পরিচালনার জন্য বিটিআরসি বাংলাদেশের স্থানীয় অ্যালায়েন্স লজ এর আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গনি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ফোলি হোয়াগ এলএলপিকে আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছিল।
বাংলাদেশের আদালতেও বিটিআরসির বিরুদ্ধে ওয়ার্ল্ডটেল একাধিক মামলা রুজু করেছিল, যার প্রত্যেকটিতে তারা পরাজিত হয়েছে বলে জানায় বিটিআরসি।