জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নতুন একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ বা বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০। প্রথমবারের মতো খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়নের জাবুসা গ্রামের ১৫ কৃষক সম্মিলিতভাবে ১২ একর জমিতে এই জাতের ধানের প্রথম আবাদ করেছেন। বোরো জাতের ধান ক্ষেতে সবুজ ও বেগুনি রঙের সংমিশ্রণে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র। প্রতিদিন এই মনোরম ও সুদৃশ্য শস্য মানচিত্র দেখতে ভিড় করছে স্থানীয়রা। মূলত কৃষকদের এই ধান চাষে আকৃষ্ট করতে এ জাতীয় প্রদর্শনী ব্লক। উচ্চমাত্রার জিঙ্ক ও পুষ্টি সমৃদ্ধ সোনালি রঙের এই ধান নাজিরশাইল বা জিরা ধানের দানার মতো। ফলনও বেশি। রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রব না হলে প্রতি হেক্টরে ৭ থেকে ৮ টন ধান উৎপাদন হবে। উফশী জাতের হওয়ায় এর উৎপাদন খরচ হাইব্রিড ধানের চেয়ে কম। ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান উৎপাদন এবং আহরণের চেয়ে সময়ও লাগবে কম। এপ্রিলের মাঝামাঝি এই ধান উঠে যাবে কৃষকের গোলায়। ভাত খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। পরীক্ষামূলক এই ধানের আবাদ সফল হলে দেশের কৃষক এর চাষে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে অবশ্যই। আর তাতে মিটবে খাদ্যের চাহিদা। নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা।
বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। স্বাধীনতা উত্তর তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব বিস্ময়কর উত্তরণ বিশ্বেরও বিস্ময় বৈকি। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জাতীয় কৃষিনীতি এবং পরে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তবানুগ কৃষি কৌশল অবলম্বন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে। বাংলাদেশ বিশ্বে সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে অবস্থান করে সমাদৃত হয়েছে বিশ্ব পরিমন্ডলে। মাছ বিশেষ করে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনেও বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ঈর্ষণীয়Ñ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে অদ্বিতীয়, একেবারে প্রথম স্থানে। কৃষিই বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রাণ। অনাদিকাল থেকেই দেশের মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য নির্ভর করেছে কৃষির ওপর। ৭০ শতাংশ মানুষ এখনও গ্রামে বসবাস করে এবং তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশায় জড়িত। সেক্ষেত্রে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা থাকবে চিরদিন।