স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট-১ আসনের এমপি ও বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন নিজ আসনের এক বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ডের হিসাব তুলে ধরলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি সিলেট সার্কিট হাউজের সভা কক্ষে সিলেটের কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সংসদীয় আসনের উন্নয়ন কাজের এই চিত্র তুলে ধরেন। ঘন্টাব্যাপী উন্নয়ন কাজের বক্তব্যে দেয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং আগামীদিনে সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কাজের সহযোগীতা চান।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন,সাবেক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিদুল ইসলাম, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদ উদ্দিন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ, সিলেটের চেম্বার নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন তার মেয়াদে সিলেটে চলমান মেঘা প্রকল্পগুলোর চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম সিলেটকে তারবিহীন নগরী গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পাইলট প্রকল্পের একাংশের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে ভূগর্ভ দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনও শুরু হয়। নির্বাচনী প্রতিশ্র“তির অংশ হিসেবে দেশের মধ্যে প্রথম ডিজিটাল শহরও হতে যাচ্ছে সিলেট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৯২ সালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি ৪ লেন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাইফুর রহমান তা বন্ধ করে দিলেন। এখন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজের অর্থ বরাদ্ধ হয়ে গেছে। মাস দুয়েকের মধ্যে এর টেন্ডার হবে এবং মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ দ্রুতই শুরু হবে। এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়নে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতিও অনেক ভালো। আশা করি সিলেট-ঢাকা সরাসরি রুট চালু করা যাবে। এই জানুয়ারিতেই তা চালুর চেষ্টা করছি। মন্ত্রী বলেন, সিলেটে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জায়গা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। শীঘ্রই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। এছাড়া পুরো সিলেটকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে যার মাধ্যমে সিলেটে অপরাধের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে সিলেটকে ডিজিটাল সিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যে কোনো সেবার জন্য ৩৩৩-এ কল করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘৩৩৩’ নাম্বারে ফোন দিয়ে মানুষ এখন ঘরে বসে ৫২টি সেবা পাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী সিলেট সিটি করপোরেশনকে ১২শ’ কোটির উপরে টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বরাদ্দ। সিলেটের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রাস্তা-ঘাট, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সিলেটে শিক্ষার মান উন্নয়নে এক সাথে ৬০ টি নতুন ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ১২৮টি কলেজে আড়াই থেকে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শাহপরান দরগাহে দৃষ্টিনন্দন করা, সুরমা নদী উদ্ধার, সিলেটের ট্রাক ও বাস টার্মিনালকে নতুনভাবে আধুনিকায়ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব মেঘা প্রকল্প ছাড়াও সিলেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সৌন্দর্যবর্ধন ও অবকাঠামো উন্নয়নে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনাও সিলেটের সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত একবছরে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওসমানী হাসপাতালের উপরে আরো কয়েটি তলা হচ্ছে যা রোগীদের সেবার দেয়ার জন্য, ক্যজুয়ালিটি বিভাগ চালু করা, নতুন পরিসরে ইমার্জেন্সি বিভাগ চালু, নতুন এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ চালু, নতুন আরেকটি মেডিসিন ওয়ার্ড চালু, আইসিইউ-২ নামে নতুন আরেকটি আইসিইউ বিভাগ চালু, অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত নতুন একটি সিটিস্ক্যান মেশিন চালু, নবজাতকের জন্য বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র চালু, বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু এরমধ্যে অন্যতম। ড. এ.কে আবুল মোমেন বলেন, সিলেট-আখাউড়া রেলপথকে ডুয়েল গেজ করা হবে। তখন এই রুটে নতুন ট্রেন আনা হবে। তারআগে যে ট্রেনগুলো আছে সেগুলো নতুন বগি সংযোজন করা হচ্ছে। যারমধ্যে এসি বগিও থাকবে। আগামী সোমবার এসব নতুন বগি সংযোজন করা হবে।
বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রীদের হয়রানি বন্ধে প্রত্যেক বিমানবন্দরে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের সেবা দিতে প্রতিটি মিশনে একটি এপস চালু হবে। যে এপসের মাধ্যমে প্রবাসীরা ৩৩ টি সেবা পাবেন। ইতোমধ্যে ৫৮টি মিশিনে এটি চালু করা হয়েছে। এছাড়া প্রবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে মিশনের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। যাতে তারা আরও বেশি আয় করতে পারেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন দেশ নয়, এখন ল্যান্ড অব অপোরচোনিটি (সম্ভাবনার দেশ)। এই মুজিববর্ষে সারা বিশ্বকে আমরা তা জানান দিতে চাই। এজন্য বিশ্বজুড়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। ইতোমধ্যে ইউনেস্কো যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে সম্মত হয়েছে।
এরআগে গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিলেট পৌঁছে নগরীর চলমান বিদ্যুতের তার আন্ডারগ্রাউন্ড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন। নগরীর দরগাহ গেইট এলাকায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
