কাজিরবাজার ডেস্ক :
আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং দাম কমাতে সরকারী ব্যবস্থা গ্রহণে গঠিত এই টাস্কফোর্স সুপারিশ করবে। বাজারে পণ্যের দাম কমাতে টাস্কফোর্স কাজ শুরু করেছে। রোজায় দ্রব্যমূল্য কমাতে তিন মাস আগে প্রস্তুতি গ্রহণ করে সরকার। এ কারণে ইফতার সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার হয়-এমন সব ভোগ্যপণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ এবং খেজুরের পণ্যের বিপুল পরিমাণ আমদানি ও মজুদ বাড়ানো হয়েছে। ভোজ্যতেলের দাম কমাতে তিন স্তরে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমানো, শূন্য মার্জিনে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুযোগ, টিসিবির সক্ষমতা চারগুণ বাড়িয়ে ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তাসহ নানামুখী উদ্যোগের কারণে রোজার আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। স্বস্তির হাওয়া বইতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এ মুহূর্তে ভোগ্যপণ্যের কোন সঙ্কট নেই দেশে। সরকারী সংস্থা টিসিবিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা এবং মাত্র ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এককেজি ছোলা। সরবরাহ এত বেশি যে, দুই কেজি করে ছোলা ও পেঁয়াজের পরিবর্তে এখন ৫ কেজি করে দেয়া হচ্ছে এ দুটি ভোগ্যপণ্য। রাজধানীসহ সারাদেশের খুচরা বাজারে পণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী। ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম কমে গেছে।
নিত্যপণ্যের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেক কমে মানভেদে প্রতিকেজি ২৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলার দাম কেজিতে কমেছে প্রায় ১০ টাকা। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে। তবে খোলা পামওয়েল ও সয়াবিন কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। চাল, আটা, আলু, মসুর ডাল, চিনি এবং ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। গ্রীষ্মকালীন নতুন শাক-সবজি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এর পাশাপাশি শীতকালীন সবজিও রয়েছে। ফলে সবজির দাম বাড়ার কোন আশঙ্কা নেই। আশা করা হচ্ছে, এবারের রোজায় নতুন করে আর কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। বরং বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম কমার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসতে শুরু করায় সাধারণ ভোক্তাদের অস্বস্তি দূর হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, রমজান সামনে রেখে এবার আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। এ কারণে রমজান মাস যত এগিয়ে আসছে ঠিক সেভাবেই ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। দেশে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও মজুদ রয়েছে। এর পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনও ভাল। সব মিলিয়ে পণ্য মজুদ করা হলে ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনবেন। এটা বুঝতে পেরে তারা এখন ন্যূনতম মুনাফায় পণ্য বিক্রি করছেন। ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমে আসছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা এখন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। সরকারী এই সংস্থা প্রথমবারের মতো দেশের ১ কোটি পরিবারের হাতে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে। রমজানের আগে ও মাঝে দুবার করে তারা পণ্য পাবেন। এতে দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে টিসিবি চারগুণ বেশি পরিমাণ পণ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। সরকারী এই উদ্যোগের সুফল এখন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর চাপ কমে গেছে। এ কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম কমে আসছে।
রমজান মাসে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখার আবেদন : রোজার সময় বেশি চাহিদাসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের একটি হচ্ছে পেঁয়াজ। মার্চের শুরুতে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেলে বাজার সামাল দিতে ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। সেই অনুমতির সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ মঙ্গলবার। তবে অতিপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি আরও একমাস আমদানি অব্যাহত রাখতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি অনুমতি ইস্যু কার্যক্রমের সময়সীমা ২৯ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। আমদানির সময়সীমা এক মাস বাড়ানো হলে বিদ্যমান সুযোগের আওতায় পেঁয়াজ আমদানিকারকরা আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজের আইপি ইস্যু কার্যক্রম চালাতে পারবেন। একই সঙ্গে এলসি খুলতে পারবেন। এতে রমজানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল থাকবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও যেসব উদ্যোগ : রমজান সামনে রেখে দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে চারগুণেরও বেশি। টিসিবির মাধ্যমে রোজার আগে ও মাঝে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। তবে ব্যবসায়ীদের এই অপকর্ম রুখে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি। ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুদের বড় বড় ভা-ার ধরা পড়ছে অভিযানের মুখে। এ পরিস্থিতি বাজারে দ্রুত পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বেশকিছু উদ্যোগ রয়েছে প্রশাসনের। সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো হচ্ছে- ভোজ্যতেল ও চিনির শুল্ক প্রত্যাহার, ভারত থেকে ফের পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের নিয়মিত বাজারে অভিযান পরিচালনা, এলসি শূন্য মার্জিনের আমদানির সুযোগ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম মাঠে নামানো, মজুদদারদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বৃদ্ধি ও বাজার পর্যবেক্ষণ, ফেরি পারাপারে পণ্য পরিবহনের অগ্রাধিকার ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের সহায়তা, পণ্য পরিবহনের সময় রাস্তায় কিংবা বাজার চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ পুলিশের নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মতো পদক্ষেপ রয়েছে। এর পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। রোজা সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনতে আরও যদি কোন পদক্ষেপ নিতে হয় সে বিষয়েও তাৎক্ষণিক যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে প্রশাসন। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা এবং ভর্তুকির মূল্যে খাদ্য সহায়তার বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। আর পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।