খুচরা বাজারে খোলা ভোজ্যতেলের দাম কমেনি, টিসিবির ট্রাকের সামনে ভিড় বাড়ছে

1

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভোগ্যপণ্যের বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে দাম কমেনি খোলা ভোজ্যতেলের। এখনও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সব ধরনের ভোজ্যতেল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিলিটার পামওয়েল ১৩০ টাকা নির্ধারিত মূল্য হলেও ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা দিয়ে। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন সরকার নির্ধারিত দাম ১৩৬ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। লিটারে ২৪ টাকা বেশি দরে এই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ায় ভোক্তাদের অসন্তুষ্টি বাড়ছে। তবে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বাজারে তেলের সরবরাহ বেড়েছে। বিশেষ করে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাইকারি বাজারে সব ধরনের ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল এবং পেঁয়াজের মজুদ আগের চেয়ে বেড়েছে। ভর্তুকি মূল্যে ভোগ্যপণ্য কিনতে নগরীর টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রমে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো রয়েছে সব ধরনের বোতলজাত সয়াবিন তেল। জামশেদ স্টোরের বিক্রেতা আব্দুল গনি বলেন, বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ বেড়েছে। সেই তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের সরবরাহ কম। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামেই বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। কিন্তু খোলা সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম পাইকারি বাজারে বেশি হওয়ার কারণে খুচরা বাজারে কমছে না। এদিকে, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই চাহিদা বাড়ে ছোলা, ডাল, তেল, চিনিসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের। ফলে বেড়ে যায় বেচাকেনাও। কিন্তু সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হলেও বেচাকেনা তেমন নেই। এমনকি আগের চেয়ে এসব পণ্যের দাম কিছুটা কমলেও ক্রেতার উপস্থিতি কম।
আমদানিকারকদের তথ্যমতে, পুরো বছর দেশে ছোলার চাহিদা থাকে প্রায় দুই থেকে দুই লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে রমজানেই কেবল চাহিদা থাকে প্রায় ৭০ হাজার টন। অথচ চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম সাড়ে আট মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা আমদানি হয়েছে আড়াই লাখ টনের বেশি। রমজানে ৭০ হাজার টনের চাহিদা থাকলেও গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার টনের বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অবিক্রীত ছোলার মজুদও ছিল এবার। সব মিলিয়ে শুধু রমজানের চাহিদার দ্বিগুণ ছোলা মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে পাইকারি বাজারে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে ছোলাসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। শুধু ছোলা নয়, মটর-মসুর ডাল, এমনকি সয়াবিন তেল ও চিনির আমদানিও হয়েছে চাহিদার চেয়ে বেশি। তবে রমজান সামনে রেখে সে অনুপাতে গত কয়েকদিনে দেশের অন্যতম এ ভোগ্যপণ্যের বাজারে কোন বেচাকেনা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, খাতুনগঞ্জে লোকজনের আনাগোনা থাকলেও বেচাকেনা হচ্ছে না। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ছোলা মানভেদে কেজিপ্রতি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বেশি ছিল। ছোলার মতো মটরের দামও কমেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মটর ৪৭ টাকা থাকলেও সর্বশেষ বুধবার ৪৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। একইভাবে মসুর ডাল আগে ৮৯ টাকা ছিল, এখন ৮৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দুই লাখ ৫২ হাজার ২১৩ টন ৩২৪ কেজি ছোলা আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি আমদানি হয়েছে শেষ ৪৮ দিনে। অন্যদিকে শেষ ৪৮ দিনে এক লাখ ১০ হাজার ৯৮৬ টন ১৯০ কেজি মটর ডাল আমদানি করেছে ২২টি প্রতিষ্ঠান। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে গত ১ জুলাই থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত তিন লাখ ১২ হাজার ৫৪৬ টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ৪৮ দিনে আমদানি হয়েছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি। এই সময়ে এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৭ টন ১৯০ কেজি ডাল আমদানি হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম সাড়ে আট মাসেই আমদানি হয়েছে এর চেয়ে বেশি।
টিসিবির ট্রাকের সামনে ভিড় বাড়ছেই : ভর্তুকি মূল্যে ভোগ্যপণ্য কিনতে টিসিবির ট্রাকের সামনে ভিড় বাড়ছেই। মহানগরীর যেখানে টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম চলছে সেখানেই উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনছেন। তবে চাহিদার তুলনায় ট্রাক সেলে পণ্যের জোগান কম হওয়ায় অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করেও খালি হাতে ঘরে ফিরছেন। টিসিবির ট্রাক সেলের বিক্রেতারা বলছেন, তাদের মজুদ ও সরবরাহ পর্যাপ্ত আছে। পণ্যের মান ভাল হওয়ায় আর খোলা বাজারের তুলনায় দামে কিছুটা কম পাওয়ায় নগরবাসী টিসিবির পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। অনেকেই পণ্য পেয়েও দ্বিতীয়-তৃতীয়বার লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এ কারণে সাধারণ ক্রেতাদের কেউ কেউ পণ্য না পেয়ে ফিরছেন খালি হাতে।