কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইজিয়ামের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনোশেনকভ বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে কোনোশেনকভ বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাবাহিনী তাদের বিশেষ সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির খারকিভ অঞ্চলের শহর ইজিয়ামের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন রুশ সেনারা।’
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্বিতীয় মাসে গড়িয়েছে। ইউক্রেনের সাবেক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের খুব কাছেই অবস্থান ইজিয়ামের। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রাশিয়ার এই দাবি স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তারা বলেছেন, দখল ফিরে পেতে ইজিয়ামে এখনও লড়াই করছে ইউক্রেনীয় সেনারা। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইজিয়ামের দখল ফিরে পেতে সেখানে আমাদের সেনা সদস্যরা এখনও লড়াই করছেন।’ পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন।
সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী সদস্য’ মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব। ন্যাটোর সদস্য পদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো। কিন্তু এই কৌশল কোন কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দুই মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অভিযোগ, যে কোন সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখ- দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। তার দুইদিন পর ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। গত ১০ দিনের ব্যবধানে এই নিয়ে দুটি শহর দখল করল রুশ বাহিনী। এর আগে ১৫ মার্চ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনের দখল নেয় রুশ সেনারা। ইজিয়াম শহরটি কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ রাশিয়ার জন্য। কারণ মাত্র ৫০ হাজার মানুষ অধ্যুষিত এই ছোট শহরটি দোনেতস্ক ও লুহানস্কের অন্যতম প্রবেশদ্বার। এছাড়া এই শহরটিতে একটি রেল জংশন আছে, যা ইউক্রেনের রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন কূটনীতিক বহিষ্কার করবে রাশিয়া : ১২ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের মার্কিন সিদ্ধান্তের শোধ নেবে মস্কো। এর জবাবে মস্কো থেকে বেশ কয়েকজন মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। গত মাসে ওয়াশিংটন জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মিশনে নিয়োজিত রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হবে। পরে জাতিসংঘে নিযুক্ত আরও এক রুশ নাগরিককে বহিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি ওই রুশ নাগরিক গুপ্তচর।
ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান সমর্থন করেন ৭১ শতাংশ রুশ নাগরিক : ইউক্রেনে সংঘাত চলছেই। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভিযান চালায় রাশিয়া। তারপর থেকে যুদ্ধ থামার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো এই হামলার ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশই এই হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে রাশিয়ার সরকারী জরিপ এবং স্বাধীন সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, অধিকাংশ রুশ নাগরিক ইউক্রেনে চলমান অভিযানকে সমর্থন করেন। গত ৫ মার্চ ‘রাশিয়ান পাবলিক অপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার’ পরিচালিত একটি জরিপের তথ্যে জানানো হয় যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ সমর্থন করেন ৭১ শতাংশ রুশ নাগরিক। আর এই আগ্রাসন সমর্থন করেন না ২১ শতাংশ মানুষ এবং এ সম্পর্কে জানেন না ৮ শতাংশ মানুষ। যাদের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে তাদের ৭০ শতাংশ মনে করেন রুশ সেনাবাহিনীর অভিযান পরিকল্পনা মাফিক চলছে।