কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউক্রেনের মারিওপোলে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে রুশবাহিনী। মঙ্গলবার ভোর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরনগরীর নিয়ন্ত্রণ নিতে রুশ জঙ্গি বিমান থেকে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ফেলা হয়। অপরদিকে কিয়েভেও হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশরা। শহরটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় মঙ্গলবার রুশ গোলা নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় ইউক্রেন বাহিনী রুশ সৈন্যদের প্রতিরোধে প্রাণপণ লড়াই করে।
এদিকে মারিওপোলে রুশবাহিনীর অনবরত গোলাবর্ষণে শহরটিতে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পরিপাটি এই শহর এখন ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছেছে। মানুষের বাঁচার অবলম্বন নেই বললেই চলে। খাবার, পানি ও ওষুধের তীব্র সঙ্কটের মুখোমুখি শহরটির বাসিন্দারা। মারিওপোল ও কিয়েভে হামলা বৃদ্ধির মধ্যেই সোমবার রাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফের আলোচনার প্রস্তাব দেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট বলেন, বিতর্কিত ভূখন্ডগুলোর মর্যাদা ও সম্ভাব্য গণভোট নিয়ে আমি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। জেলেনস্কি বলেন, প্রায় এক মাস ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধে ‘যে কোন পদ্ধতিতে’ তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত। কারণ এ সংঘাতে ইউক্রেনের বিভিন্ন নগরী ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, এমনকি রাশিয়ার অধিকৃত ক্রিমিয়া এবং মস্কো সমর্থিত ডনবাসের মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই আমি এসব বিষয় তুলে ধরতে প্রস্তুত রয়েছি। জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘সেখানে বিভিন্ন আবেদন বা ঐতিহাসিক ভাষণ দেয়া হবে না। আমি পুতিনের সঙ্গে সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়া ইউক্রেনের কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিওপোলে হামলার তীব্রতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে সোমবার আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত আল্টিমেটামও দিয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ এ প্রস্তাব মানেনি।
ওদিকে কিয়েভের কাছের মাকারিভ শহর রুশ বাহিনীর কাছ থেকে পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা রুশ সেনাবাহিনীকে হটিয়ে নিজেদের পতাকা উড্ডয়ন করেছে। কিয়েভের প্রাণকেন্দ্র থেকে ৩০ মাইল দূরে এই শহরের অবস্থান। সোমবার ইউক্রেন জানায়, সৈন্যদের সাহসী পদক্ষেপের কারণে মাকারিভ শহর রুশদের কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
কিয়েভ দখলে রুশ আক্রমণ স্থবির হয়ে পড়ছে বলে বিশ্লেষকরা যখন অনুমান করছেন, তখন ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই শহর মুক্ত করার দাবি জানাল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মাকারিভে ইউক্রেনের পতাকা উড্ডয়ন করা হয়েছে।
শরণার্থীদের জন্য নোবেল পদক বিক্রির ঘোষণা রুশ সাংবাদিকের : রুশ হামলার জেরে শরণার্থী হওয়া ইউক্রেনীয়দের জন্য তহবিল গঠন করতে নিজের নোবেল পদক দান করছেন ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং রাশিয়ার নাভায়া গেজেটা পত্রিকার সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভ। মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেন তিনি।
নাভায়া গেজেটায় নিজ নামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে মুরাতভ বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনে ১ কোটিরও বেশি মানুষ শরণার্থী হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নাভায়া গেজেটা ও আমি ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য তহবিল গঠন করছি এবং এই উদ্দেশে ২০২১ সালে প্রাপ্ত নোবেল পুরস্কারের পদক বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিক্রির টাকা তহবিলে যোগ করা হবে।’
ইতোমধ্যে কয়েকটি নিলাম সংস্থার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি তাদের এই পদকটি নিলামে তোলার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। পুতিন সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত দিমিত্রি মুরাতভ ও নোভায়া গেজেটা ইতোমধ্যে তাদের প্রকাশিত নিবন্ধে বলেছে, ইউক্রেনে এই মুহূর্তে ৫টি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত রাশিয়ার। সেগুলো হলো সম্মুখযুদ্ধ বন্ধ করা, বন্দিবিনিময় করা, মৃতদেহ আটকে না রাখা, মানবিক করিডোর ও ত্রাণসহায়তা সরবরাহ করা এবং শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া। ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর ফিলিপিন্সের সাংবাদিক ও দেশটির ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে র্যাপলারের সম্পাদক মারিয়া রেসার সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন দিমিত্রি মুরাতভ।
ন্যাটোর সদস্য হতে চাই না : টানা প্রায় এক মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে রাশিয়া। জল, স্থল ও আকাশপথে চালানো রুশ সেনাদের জোরদার হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পূর্ব ইউরোপের এই দেশ। অবশ্য যুদ্ধ বন্ধে মস্কো-কিয়েভ আলোচনা অব্যাহত রাখলেও এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোন ফল আসেনি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি, রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টির বিনিময়ে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ না চাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি আলোচনা করতে প্রস্তুত। সোমবার রাতে ইউক্রেনীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এটি সবার জন্য একটি ভাল উপায়। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো জানে না তারা ন্যাটোর বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কী করবে, ইউক্রেন নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায় এবং রাশিয়াও চায় না ন্যাটোর আরও সম্প্রসারণ হোক।
দুর্ভিক্ষের শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ : প্রধান কৃষি পণ্য রফতানিকারক দুই দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীরা সোমবার এ কথা বলেন। এক বৈঠকে ইইউ কৃষিমন্ত্রীরা বলেছেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ইউরোপীয় ব্লক ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাষের এলাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এসব জমি খামারের উৎপাদনের জন্য ন্যস্ত করা হবে। পশু খাদ্য আমদানি বিধিনিষেধ সহজ করা হবে এবং ইইউর কৃষকদের সরাসরি সহযোগিতা আরও বাড়ানো হবে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন ইভেস লে ড্রিয়ান সমপক্ষীয়দের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বলেন, সংঘাত ‘শীঘ্রই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি নিয়ে আসবে’, শুধু ইউরোপের খাদ্য নিরাপত্তাকেই প্রভাবিত করবে না বরং বিশ্বকে প্রভাবিত করবে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে, কারণ আমরা জানি শস্য উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে থাকা ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।’
পুতিন ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার বলেছেন, এটি ‘স্পষ্ট’ যে রাশিয়া ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহারের চিন্তা করছে এবং তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাশিয়া যদি এটি বেছে নেয় তবে তাদের কঠোর পশ্চিমা প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র মজুদ করে রেখেছে ভøাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক এই অভিযোগের জবাবে বাইডেন বলেন, ‘তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’ ওয়াশিংটনে ব্যবসায়ী নেতাদের সমাবেশে বাইডেন বলেন, ‘এটি শুধু সত্য নয়, রাশিয়ার রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের হামলার ব্যাপারে আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি।’