কাজিরবাজার ডেস্ক :
অসাধু মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে এবার নিউজপ্রিন্টের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। গত এক বছরে দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণের কাছকাছি। মান ভেদে এক সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি দাম বেড়েছে ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে করে সংবাদপত্র শিল্প গভীর সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। দুই দশক আগে সরকারী প্রতিষ্ঠান খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেসরকারী খাতের মিল মালিকরা একচেটিয়া বাণিজ্য করার সুযোগ নিচ্ছেন। নানা অজুহাত দাঁড় করিয়ে সপ্তায় সপ্তায় বাড়ানো হচ্ছে কাগজের দাম। এদিকে দৃষ্টি দেয়ার কেউ নেই। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সংবাদপত্র ও প্রকাশনা শিল্পের ভবিষ্যত। শিক্ষার অন্যতম উপকরণ কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নিউজপ্রিন্টের মূল্য নিয়ন্ত্রণে নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে সরকারী পদক্ষেপ সবচেয়ে বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ভোগ্যপণ্যের অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের আদলে নিউজপ্রিন্ট মিল মালিকদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে ওঠছে দেশে। অভিযোগ রয়েছে, এরা ইচ্ছেমতো কাগজের দাম বাড়িয়ে-কমিয়ে থাকেন। কাঁচামালের সঙ্কটের কথা বলে বর্তমানে নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিউজপ্রিন্টের প্রধান কাঁচামাল দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। পুরাতর অব্যবহৃত কাগজ, বই, পুস্তক ও প্রধানত পুরনো পত্রিকা রি-সাইক্লিং করে কাঁচামাল তৈরি করা হয়। এছাড়া নিউজপ্রিন্ট তৈরির জন্য কিছু পাল্প ও উপকরণ বাইরে থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। এর বাইরে তেমন কিছু আর প্রয়োজন হয় না। গত কয়েক মাস ধরে শুধু কারসাজি করে নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ানো হয়েছে। হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। অথচ সরকারীভাবে কাগজের বাজার তদারকির জন্য কোন কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান নেই। নিউজপ্রিন্টের অত্যধিক দাম বাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ ফজলুর রহমান পর্বত বলেন, মূলত সরকারী প্রতিষ্ঠান খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কাগজ ব্যবসায় নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ানো হচ্ছে ইচ্ছেমতো। যখন ইচ্ছা হয়, তখন দাম বাড়ায়। ডিলার, এজেন্ট, পাইকার ও পরিবেশক নিয়োগের ধার ধারে না। যাকে খুশি তাকে দিয়ে বাজারে ব্যবসা করায়। মিল মালিকদের এই সিন্ডিকেটের কারণে নিউজপ্রিন্টের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এরা এত শক্তিশালী যে, কইতেও পারিনা সইতেও পারিনা। ভোগ্যপণ্যের মতো নিউজপ্রিন্টের বাজারে এখন অভিযান পরিচালনা করা উচিত।’
এদিকে, দেশের বৃহত্তম কাগজের মার্কেট হিসেবে খ্যাত রাজধানীর নয়াবাজার, নওয়াব ইউসুফ রোড এবং জিন্দাবাহার লেন ঘুরে দেখা গেছে, নিউজপ্রিন্টের সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। এসব মার্কেটের বেশির ভাগ ডিলার, এজেন্ট, পরিবেশক এবং ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করার পাশাপাশি কাগজের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনা পরবর্তী স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাওয়া, নতুন বই ছাপা, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা ও কলেজ ভর্তিসহ পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বাজারে নিউজপ্রিন্টের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। আর এই সুযোগটাকে পুরোদমে ব্যবহার করে মিল মালিকরা কাগজের দাম বাড়াচ্ছেন দফায় দফায়। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি হাজার হাজার টাকা দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জিন্দাবাহার প্রথম লেনের পেপার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সেলস এ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ কাজী রিয়াদ হাসান বলেন, শবে বরাতে টানা তিনদিন সরকারী ছুটি থাকলেও বন্ধের মধ্যে টনপ্রতি নিউজপ্রিন্টে ৩ হাজার টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর এ ধরনের রেওয়াজ আগে কখনও দেখা যায়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মিলগুলোতে উৎপাদন ও মজুদ যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও শুধু চাহিদা বাড়ার কারণে দাম বাড়ানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ গ্রেড নিউজপ্রিন্ট যেটা গত সপ্তাহে প্রতিটন বিক্রি হয়েছে ৫৮ হাজার টাকা, সেই সমপরিমাণ কাগজে রবিবার গুনতে হয়েছে ৭৩ হাজার টাকা। আর গত বছর ২০ মার্চ এই কাগজ বিক্রি হয়েছে প্রতিটন ৪৬ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে গত এক বছরে দাম প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিলেও নিউজপ্রিন্টের সঠিক দাম নির্ধারণের বিষয়টি দেখার কেউ নেই। এ কারণেই নিউজপ্রিন্টের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
কাগজের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ডিলার, পাইকার ও প্রকাশকরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে নিউজপ্রিন্টসহ সব ধরনের কাগজের দাম। মান ভেদে কাগজের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সব মিল মালিক এক হয়ে সিন্ডিকেট করেছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে কোন সংস্থা না থাকায় ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন ডিলার, পাইকার, প্রকাশক, সর্বোপরি সাধারণ ভোক্তারা। বর্তমানে দেশে বেসরকারী খাতে ছোট বড় মিলিয়ে ৫০-৬০টি মিলে বিভিন্ন ধরনের কাগজ উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশীয় নিউজপ্রিন্টের বাইরে একটু ভালোমানের নিউজপ্রিন্ট বাইরে থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। এক্ষেত্রে চাহিদার প্রায় সিংহভাগ নিউজপ্রিন্টের জোগান দেয় দেশীয় মিলগুলো। কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ খাতে চরম নৈরাজ্য চলছে। এখন শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে কাগজশিল্প। নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ায় সংবাদপত্রের প্রকাশনা হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
দফায় দফায় বাড়ছে নিউজপ্রিন্টের দাম : দফায় দফায় বাড়ছে নিউজপ্রিন্টের দাম। শবে বরাতের বন্ধের মধ্যেও টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা দাম বাড়ানো হয়। দেশে বেসরকারী খাতে নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন ও বিপণনের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বগুড়ার আজাদ পাল্প এ্যান্ড পেপার মিলস। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি এ-৪৭জিএসএম ২৮ ইঞ্চি রুল প্রতিটন নিউজপ্রিন্ট কাগজ সরবরাহ করেছে সাড়ে ৫৩ হাজার টাকায়। আর সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ সমপরিমাণ একই গ্রেডের কাগজ সাড়ে ৭৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রতিটনে দাম বেড়েছে ২০ হাজার টাকা। ভূঁইয়া পেপার মিলস গত ৯ মার্চ প্রতিটন ২৮ ইঞ্চি রুল নিউজ পেপার সরবরাহ করেছে ৪৫ হাজার টাকায়। রবিবার ২০ মার্চ সেই একই পরিমাণ কাগজ ৬৫ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে দর কষাকষিতে টনপ্রতি ২ হাজার টাকা দাম কমানো হয়েছে। মোস্তফা পেপার মিলস ২৮ ইঞ্চি রুল প্রতিটন গত বছরের ২৫ অক্টোবর বিক্রি করেছে ৬০ হাজার টাকায়। কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই একই কাগজ কিনতে এখন সংবাদপত্র শিল্প মালিকদের ৮০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।
একইভাবে বিসিএল পেপার মিলস প্রতিটন ৫৫ হাজার টাকার নিউজপ্রিন্টে ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। এছাড়া আলনুর পেপার মিলস, পূর্বাচল পেপার মিলস, রাজা পেপার মিলসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে যাচ্ছে নিউজপ্রিন্টের দাম। দেশের অধিকাংশ সংবাদপত্র এসব মিল থেকে কিংবা এদের এজেন্ট ও ডিলারদের কাছ থেকে কাগজ সংগ্রহ করছে। সংবাদপত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় নিউজপ্রিন্টই ভরসা। অথচ গত কয়েক মাস ধরে যেভাবে প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে তাতে সংবাদপত্র শিল্পের প্রকাশনা ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। অচিরেই নিউজপ্রিন্টের দাম কমাতে সরকারী পদক্ষেপ প্রয়োজন। নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করছেন মিল মালিকরাও। তারা বলছেন, কাঁচামাল সঙ্কটের কারণে দাম বাড়ছে। পুরাতর ওয়েস্টেজ পাওয়া যাচ্ছে না আগের মতো। এ কারণে উৎপাদনও কম হচ্ছে। তবে এই সঙ্কট স্থায়ী নয়। এ প্রসঙ্গে বিসিএল পেপার মিলসের সেলস এ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ ওলিউর নবী বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়তি। কাঁচামাল পাওয়া যায় না। এটিই বড় সঙ্কট। এ কারণে মিল মালিকরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেই দাম বাড়িয়েছেন। তিনি জানান, দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিউজপ্রিন্ট মিল মালিকদের নিজস্ব এখতিয়ার।
এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বা বৈঠকের কোন প্রয়োজন হয় না। এদিকে সংবাদপত্র প্রকাশনা শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব ধরনের কাগজের দাম কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে সংস্থাটির কার্যালয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় জানানো হয়, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এ শিল্পে টিকে থাকা কঠিন। নোয়াব সভাপতি একে আজাদ ওই আলোচনায় সংবাদপত্র শিল্পের নানান দিক তুলে ধরেন। এছাড়া কথা বলেন এ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্সের (এ্যাটকো) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী। এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় নোয়াব করপোরেট কর ও ভ্যাট কমানো এবং অগ্রিম আয়কর অব্যাহতি চেয়েছে। এনবিআরকে নোয়াব জানিয়েছে, সংবাদপত্রের উৎপাদন খরচ বিক্রি মূল্যের কয়েক গুণ বেশি। বিজ্ঞাপন আয় দিয়ে ব্যয়ের ঘাটতি কিছুটা পূরণ হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বিজ্ঞাপন আয় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। বর্তমানে বিজ্ঞাপনের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। দেড় বছর আগেও যে নিউজপ্রিন্টের দাম ছিল প্রতি টন ৫৭০ মার্কিন ডলার, বর্তমানে তা ৮৯০ ডলার। এ অবস্থায় কোভিডে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অংশবিশেষ সংবাদপত্রশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। এছাড়া নোয়াব নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ভ্যাটমুক্ত সুবিধা দেয়া অথবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণের দাবি করেছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ এবং কাঁচামালের ওপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশসহ মোট ৯ শতাংশ। অথচ অধিকাংশ সংবাদপত্রের মোট আয়ের ৯ শতাংশ লাভই থাকে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে উৎসে কর ২ শতাংশ এবং এআইটি শূন্য শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
জানা গেছে নিউজপ্রিন্টসহ সব ধরনের কাগজের দাম বাড়ায় ব্যয় বেড়েছে শিক্ষা উপকরণেও। ফলে চাপে পড়েছেন অভিভাবকরা। এক্ষেত্রে সরকারের কোন তদারকি না থাকায় দেশের কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জিম্মি সংবাদপত্র শিল্প ও সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় এ খাতের উদ্যোক্তা থেকে আমদানিকারকদের একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবেন-এমন শঙ্কা তাদের। চীন, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে বেশি কাগজ আমদানি হয়। এসব দেশে কাগজ উৎপাদনের মূল কাঁচামালের (পাল্প) দাম বেড়েছে। ফলে কাগজের দামও বাড়তি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সুযোগ নিয়েছেন দেশের মিল মালিকরা। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে দাম বাড়িয়েছেন। অর্থাৎ সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে। এদিকে কাগজের দাম বাড়ায় বই উৎপাদনের খরচও বেড়েছে। ফলে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রকাশনা শিল্পে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন পত্রিকা নয়াবাজার থেকে সংবাদপত্র ছাপানোর কাগজ ক্রয় করে। তবে বর্তমানে দাম বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে প্রিন্ট মিডিয়া শিল্প। গত পাঁচ মাসের ব্যবধানে প্রতি টন দেশী কাগজের দাম মানভেদে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এতে করে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পত্রিকাগুলো।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশীয় সংবাদপত্রে ৪৫ জিএসএমের (স্ট্যান্ডস ফর গ্রামস পার স্কোয়ার মিটার) নিউজপ্রিন্ট ব্যবহার হচ্ছে। দেশী নিউজপ্রিন্ট হয় ৪৮ থেকে ৫০ জিএসএমের। ফলে প্রতি কেজি কাগজে পত্রিকার উৎপাদন কম হয়। ১ কেজি বিদেশী কাগজে ২৪ পৃষ্ঠার একটি পত্রিকার ৮ থেকে ৯টি কপি ছাপানো যায়, সেখানে দেশী কাগজে হয় ৬ থেকে ৭টি। এভাবে ১ কেজি কাগজে দুটি করে পত্রিকার কপি কম ছাপা হয়। এতে সংবাদপত্র শিল্পের ব্যয়ও বাড়ছে। আবার কাগজের মান খারাপ হওয়ায় রঙিন ছাপার মানও খারাপ হচ্ছে। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের তথ্যমতে, সারা দেশে এখন সর্বমোট ৬২৪টি সংবাদপত্র রয়েছে। এর মধ্যে দৈনিক পত্রিকা ৪৭৯টি, যার ২০৩টি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। বাকি ২৭৬টি প্রকাশিত হয় মফস্বল থেকে। আর ৯৯টি সাপ্তাহিক পত্রিকার মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ৬৩টি। ২০টি পাক্ষিক পত্রিকার মধ্যে ১৬টি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। ২৪টি মাসিক পত্রিকার ২১টি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। সব মিলিয়ে ঢাকা থেকে ৩০৪টি ও মফস্বল থেকে ৩২০টি পত্রিকা প্রকাশ হওয়ার তথ্য মিলেছে। এমতাবস্থায় কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়েছে সংবাদপত্রগুলো। সরকারের আইন অনুযায়ী, সংবাদপত্র একটি সেবামূলক শিল্প। অন্যান্য সেবা খাত সরকারের কাছ থেকে নানা রকম সুবিধা ও কর রেয়াত পেয়ে থাকে। কিন্তু সংবাদপত্র শিল্প সেসব থেকে বঞ্চিত। এদিকে, পুস্তক ব্যবসায়ীদের বিদেশ থেকে কাগজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। সম্প্রতি এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংগঠনটি এ প্রস্তাব দিয়েছে। পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির উপদেষ্টা ওসমান গনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা দিয়েছেন, কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকাশনা ব্যবসায়ীরা তা পায়নি। অন্যদিকে দেশীয় ও আমদানি করা কাগজের দাম বাড়ছেই। আমদানিতে কর অব্যাহতি দেয়া হলে কাগজের দাম কমবে। তাই আমরা কাগজ আমদানিতে কর অব্যাহতির প্রস্তাব করছি।