কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ শুক্রবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত। মুসলমানদের জন্য এটি সৌভাগ্যের রজনী। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরান তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ, মিলাদ মাহফিল, দোয়া মোনাজাতসহ এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে পবিত্র রাতটি অতিবাহিত করবেন।
হিজরী বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। এই রাতে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। এই রাতে মহান আল্লাহতায়ালার নূরের জ্যোতি পৃথিবীর নিকট আসমানে প্রকাশ পায়। আর এ সময়ই আল্লাহতায়ালার মহান দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ সময়। আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয় এই মহিমান্বিত রজনী। ইসলাম ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাতের অন্যতম শবে বরাতের রাত।
মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নিজের এবং পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজন এবং মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া করবেন। আগের ২ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও এবার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় উপস্থিতি বাড়বে। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদগুলোতে শবে বরাত পালন করতে মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারী টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। এ ছাড়া দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হবে। শবে বরাতের পরদিন অর্থাৎ আগামীকাল শনিবার সরকারী ছুটি। পবিত্র শবে বরাতের রজনীতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মুসলমান কোরান তেলাওয়াত, নফল নামাজ ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন। বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে সারারাত চলবে নফল নামাজ, পবিত্র কোরান তেলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল, জিকিরসহ অন্যান্য এবাদত-বন্দেগী ও মোনাজাত।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষের মধ্যে অনেকেই নফল রোজা রাখেন। সারারাত এবাদত- বন্দেগী, জিকির ও দোয়াকালাম পাঠ ছাড়াও এই পবিত্র রাতে মুসলমানরা মৃত বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনসহ প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করে থাকেন। তাই এ রাতে কবরস্থানগুলোতেও মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় হয়। এ ছাড়া সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মাজারগুলোতেও মুসল্লিদের ভিড় থাকে।
রেওয়াজ অনুসারে শবে বরাত উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরে ঘরে ভালো ভালো খাবার-দাবার রান্না করা হয়। বিভিন্ন ধরনের হালুয়া, মিষ্টান্ন, রুটি ও মাংসসহ নিজ নিজ সাধ্যমতো বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করা হয়। নিজেরা খাওয়া ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে এসব খাবার বিতরণ করা হয়। দরিদ্রদের মাঝেও এসব খাবার পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া এই দিনে অনেকেই দরিদ্রদের অর্থ দান করে থাকেন। এতে সামাজিক হৃদ্য ও সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই দিনে সারাদেশে ঈদের দিনের মতোই উৎসবমুখর পরিবেশের অবতারণা হয়। পবিত্র শবে বরাত পালনের মধ্য দিয়ে সমাজে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ধনী-গরীব বৈষম্য কিছুটা কমে আসে।
মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতিতে মসজিদে মসজিদে এশার নামাজের পর থেকেই দফায় দফায় ওয়াজ মাহফিল, জিকির ও মিলাদের পর বাদ ফজর নিজের এবং স্বজনদের পাশাপাশি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর রহমত কামনায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র লাইলাতুল বরাতের সমাপ্তি হবে। পবিত্র শবে বরাত উদযাপন উপলক্ষে আজ শুক্রবার বাদ মাগরিব ও বাদ এশা এবং দিবাগত রাত ২টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল শেষে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।