জতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশীরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছে দীর্ঘদিন থেকে। সংঘাতময় রাষ্ট্রগুলোতে নিয়োজিত শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা খুব জনপ্রিয়। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আঞ্চলিক বৈষম্য বাধা হয়নি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের। সবার উর্ধে উঠে নিজেদের তারা উৎসর্গ করেছেন বিশ্বমানবতার সেবায়। দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিক আচরণে সংঘাতময় দেশগুলোতে মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয়। একসময় এসব দেশের মানুষ ‘বাংলাদেশ’ নামটির সঙ্গে পরিচিত ছিল না। তাদের কাছেই এখন বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়। কয়েকটি দেশে প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও রাস্তার নামকরণ হয়েছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের নামে। অনেক দেশে জনপ্রিয় ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় হয়ে উঠেছে বাংলা ভাষা। কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিবস পালিত হয়। ছেলেমেয়েরা দিবসগুলোর থিম সঙ্গীত থাকে। বিভিন্ন মিশনে মাঝে মধ্যে সংবাদকর্মীদের নিয়ে যাওয়ার কারণে দেশের মানুষ তাদের বীর সন্তানদের সুনামের কথা জানতে পারে। জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্মকর্তারা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রায়ই বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে ডিআর কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের সকল সংঘাতপূর্ণ এলাকার জনমনে শ্রদ্ধার স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী বাহিনী।
এসব কারণে শান্তি মিশনে বাংলাদেশীদের কদরও বেশি। মিশনে যোগদানকারী সৈনিকরা শুধু বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল করে না, একই সঙ্গে রেমিটেন্সের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি শান্তিরক্ষী পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনবল প্রেরণকারী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বিশে^র বিভিন্ন দেশে ৯টি মিশনে প্রায় সাত হাজার শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশ সদস্য। ১৯৮৮ সালে ইরাক ও ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে ১৫ জন বাংলাদেশীর দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। গত বছর ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ দিবস পর্যন্ত ৩২ বছরে এক লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশী বিশে^র ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন দুই হাজার ১৮৪ জন নারী। মহাসচিবের অনুরোধ অনুযায়ী আরও বেশি শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ মিশনে যোগদান করবে। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও তারা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন, এই প্রত্যাশা সকলের।