সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট এর আয়োজনে এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর সহযোগিতায় ১৫দিন ব্যাপী মহান একুশের চেতনায় নাট্য প্রদর্শনীর ৬ষ্ঠ দিন ১ মার্চ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট সাংসদ তাদের প্রযোজনা আবের পাঙ্খা লৈয়া নাটকটি কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে মঞ্চস্থ করে। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন রতন দেব, মো. গোলাম কিবরিয়া, ধ্রুব গৌতম, মো. আলফাজ হোসেন, সবুজ সনাতন পলাশ, বিপ্রেস দাস বায়রন, জামিল আহমেদ, ফাহমিদা এলাহী বৃষ্টি, সন্দ্বীপ দেব, ইয়াকুব আলী, সিদ্ধার্থ দে, সুমন ফারাবী, নাঈম আহমদ, সন্দ্বীপ দাস, মাহাদি হাসান আরমান, অর্নব রায়, ইউসুফ আহমদ, স্ট্রেলা রীম ফলিয়া ও এডলিনা রোদেলা ফলিয়া। নাটকটি রচনা করেছেন বদরুজ্জামান আলমগীর ও নির্দেশণা দিয়েছেন রতন দেব।
নাটকের পটভূমিতে আছে মুক্তিযুদ্ধ। ৭০ বছর বয়সে কোহিলউদ্দিন দেশে ফেরে মৈকুনের কবর থেকে একদলা মাটি নিয়ে যাবে বলে। যে মাটি তার কবরে থাকবে। শেষরাতের এক ছোট্ট সময়ে মাটি তুলতে যাওয়ার পথে কোহিলউদ্দিনের স্মৃতিতে ভেসে উঠে চারক্লাসে পড়া কোহিলউদ্দিনের আজির হোসেন স্যার থেকে যুবক কোহিলউদ্দিনের মিরাজ কমান্ডারের নেতৃত্বে অসীম সাহসের অসম যুদ্ধের ঘটনা। তার বাবার চাওয়া এবং তার যুদ্ধে যাওয়ার পেছনে যে আবেগ আর আকাক্সক্ষা আর রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান- এই বোঝাপড়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যায় কোহিলউদ্দিন।
নাটকের ঘটনা, রকম, বিষয় বুঝাবুঝির সাথে সাথে বর্ননা, চরিত্র এবং অভিনয়ের একটি মিথস্ক্রিয়া হয়ে উঠতে থাকে। জলডিহি, নইলতাবাড়ি, মৌডুফি, নলুয়া, সাতুটা, কৈলাগ, নিশাকান্দা, পৈহাকুরি প্রভৃতি গ্রাম এবং তার মানুষগুলোর চেহারা স্পষ্ট হতে থাকে। লাটিম খেলা, মৎসসম্প্রদায়, গুইলমাথা খাল, বিপন্ন তুলাগাছ, মাতৃরূপ ক্রোধবঙ্কিম শেয়াল, তীক্ষ্মশিং ষাঁড় এদের সাথে সাথে কদমরসুল বিলের পিঠে বর্শা ট্যাঁটা নিয়ে জলডিহি, আরশিছড়ির হয়ে সমস্ত এলাকার দুই পক্ষের মানুষের মারামারি পার হয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ উপণিত হয় সর্বব্যাপী এক যুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধ। ডাকাত বটেশ্বর রায় হয়ে উঠে নির্ভরতার মূর্তপ্রতিক, তার জন্য কোরান খতম দেন খোদাবক্স ব্যাপারি। অকাতরে জীবন দেয় নিজাম, আলফাস, পরিমল, রৌদ্রপাল, শিবানী রায় আর জগবন্ধুরা। এই যে সাধারণ মানুষজন তার ক্ষুদ্র জীবনের গন্ডি পেরিয়ে কী এক আবেগ এবং আশায় জীবনের টানে জীবন বিলিয়ে দেয়- দেশ বলে এক মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে, দেশ সেই মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অবিরত। রাষ্ট্র এখন সবার হয়ে উঠছে না, রাষ্ট্র এখন শোষকের আর লুটেরাদের নিয়ন্ত্রণে। উত্তর পাহাড়ের কোলের কাছ থেকে যে আবের পাঙ্খা কুড়িয়ে এনে সযত্নে রেখেছিল মৈকুন, কোহিলউদ্দিনকে দেবে বলে, অপেক্ষার কৃষ্ণঘোর এখনো শেষ হয়নি কোহিলউদ্দিনের। আর তখনই একজন কোহিলউদ্দিন অনেকজন হয়ে যায়। নাটকের পাত্রপাত্রিরা সব কোহিলউদ্দিনের উত্তরসূরী হয়ে উঠে।
নাটক মঞ্চায়ন শেষে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে নাট্যদল কে সন্মাননা জানান সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট এর প্রাক্তন প্রধান পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিষ্টার মো. আরশ আলী ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ রেনু। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট এর সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত এর পরিচালনায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু। আজ ২ মার্চ মহান একুশের আলোকে নাট্য প্রদর্শনীর ষষ্ঠ দিন নাট্যালোক, সিলেট (সুরমা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাস্তি নাটকটি মঞ্চায়ন করবে। আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে মহান একুশের আলোকে নাট্য প্রদর্শনীতে নাটক মঞ্চায়ন হবে। বিজ্ঞপ্তি